পারস্পরিক শুল্ক কমাতে বৃহৎ দুই অর্থনীতি আলোচনার টেবিলে বসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। তবে আলোচনার বিষয়েও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে আলোচনার শুরু হোক চীনের পক্ষ থেকে, আর চীন বলছে যৌথ পথ উন্মুক্ত না হলে আলোচনা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা তৈরি করেছে। পারস্পরিক শুল্ক কমাতে বৃহৎ দুই অর্থনীতি আলোচনার টেবিলে বসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। তবে আলোচনার বিষয়েও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে আলোচনার শুরু হোক চীনের পক্ষ থেকে, আর চীন বলছে যৌথ পথ উন্মুক্ত না হলে আলোচনা সম্ভব নয়।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এমন এক স্নায়ুযুদ্ধ গোটা বিশ্বের পণ্যমূল্য, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, যদি দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় না পৌঁছায়, তাহলে বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। তবে দ্বিপক্ষীয় এই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মাঝে আলোচনার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বেইজিং। খবর বিবিসি।
শুক্রবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা আলোচনার প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। চীনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই আলোচনা তখনই ফলপ্রসূ হতে পারে যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘একতরফা ও উসকানিমূলক’ নীতিমালার পরিবর্তন ঘটায়।
মুখপাত্র আরো বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রই। এখন যদি তারা আলোচনায় বসতে চায়, তবে তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে হবে- এর মধ্যে রয়েছে তাদের ভুল শুধরানো এবং একতরফা শুল্ক প্রত্যাহার। চীন জোর দিয়ে বলেছে, আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে ওয়াশিংটনকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে, যা চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। এদিকে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছিলেন, চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক শিগগিরই উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে এবং তিনি আলোচনায় খুব ভালো আচরণ করবেন। সে সময়ও চীন স্পষ্ট জানিয়েছিল, কেবলমাত্র সব শুল্ক প্রত্যাহারের শর্তেই আলোচনা সম্ভব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রেষারেষি আদতে দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে, আর চীনে কমেছে কারখানার উৎপাদন, বেড়েছে বেকারত্ব ও সম্পত্তি খাতের সঙ্কট। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন ও জেপি মর্গানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আমদানি ২০ শতাংশ কমবে আর চীন থেকে আমদানি কমতে পারে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। এই পরিস্থিতি এক ধরনের মানসিক খেলার রূপ নিয়েছে— কে আগে পিছু হটবে তা নিয়ে চলছে কৌশলগত লড়াই। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প দেখাতে চান যে তিনি চীনকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছেন, আর শি দেখাতে চান, তিনি ট্রাম্পকে সংযত ও সমঝোতায় রাজি হতে বাধ্য করেছেন।
এটি মূলত দুই রেসকারের মুখোমুখি আসার মতো— যে প্রথম সরে যাবে, তাকে দুর্বল মনে করা হবে। এই অচলাবস্থা থেকে বের হতে দুই দেশই ‘কনস্ট্রাকটিভ অ্যামবিগুইটি’ বা সুচিন্তিত দ্ব্যর্থতা ব্যবহার করছে। এটি এমন ভাষা, যা দিয়ে উভয় পক্ষ আলোচনায় যাওয়ার পরও নিজেদের অবস্থানকে বিজয়ের রূপে দেখাতে পারে। আশার কথা হলো, দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, তাৎক্ষণিক কোনো বড় সমাধান আশা করা ঠিক হবে না। স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মতে, সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্য হলো ছোট ছোট ধাপে অগ্রগতি, কোনো নাটকীয় চুক্তি নয়।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন