ট্রাম্প জানিয়েছেন, দেশীয়ভাবে উৎপাদিত গাড়িতে দেশীয় উপকরণের পরিমাণ বাড়াতে নির্মাতারা আগামী দুই বছর সময় পাবেন। এই সময়ের মধ্যে, তারা আমদানিকৃত অটো পার্টসের ওপর শুল্ক ছাড় পাবে—যার পরিমাণ ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গাড়ির খুচরা মূল্যের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট উৎপাদনের ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ঘোষিত গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কিছুটা শিথিল করতে মঙ্গলবার দুটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এতে অটোমোবাইল খাতের জন্য আংশিক করছাড় এবং কিছু উপকরণের ওপর অন্য শুল্ক থেকে অব্যাহতির কথা বলা হয়েছে। একই দিনে হোয়াইট হাউজ দাবি করেছে, তারা একটি বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে প্রথম চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। নতুন এই ছাড়ের ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কারণ, ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি এবং হঠাৎ-হঠাৎ সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলার প্রবণতা বিশ্ববাজারে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল। মঙ্গলবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র মিশিগানে সফর করেন, যেখানে শিগগিরই ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, দেশীয়ভাবে উৎপাদিত গাড়িতে দেশীয় উপকরণের পরিমাণ বাড়াতে নির্মাতারা আগামী দুই বছর সময় পাবেন। এই সময়ের মধ্যে, তারা আমদানিকৃত অটো পার্টসের ওপর শুল্ক ছাড় পাবে—যার পরিমাণ ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গাড়ির খুচরা মূল্যের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট উৎপাদনের ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ট্রাম্পের ঘোষিত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকে গাড়ি শিল্পের নেতারা ব্যাপকভাবে লবিং করছিলেন। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যকার সংহত উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাতে পারত। তবে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা শুধু সাহায্য করতে চেয়েছি… যদি তারা যন্ত্রাংশ না পায়, তাহলে আমরা শাস্তি দিতে চাই না।’
তবে হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এ ছাড় শুধুমাত্র দেশে তৈরি গাড়িতে ব্যবহৃত আমদানিকৃত যন্ত্রাংশে প্রযোজ্য হবে। গত মাসে আরোপিত ৮০ লাখ আমদানিকৃত গাড়ির ওপর সরাসরি কার্যকর ২৫ শতাংশ শুল্ক অপরিবর্তিতই থাকবে। অটোমোবাইল উৎপাদকদের একটি জোট, ‘অটোস ড্রাইভ আমেরিকা’, জানিয়েছে যে এই সিদ্ধান্ত কিছুটা স্বস্তি দিলেও ‘যুক্তরাষ্ট্রের অটো শিল্পকে আরও গতিশীল করতে আরও কিছু প্রয়োজন’। কানাডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ক্যান্ডেস লেইং বলেন, ‘শুধু শুল্ক বাতিল করলেই প্রকৃত স্বস্তি মিলবে। এভাবে শুল্ক ওঠা-নামা করে চললে ব্যবসায়ীরা অস্থির হয়ে পড়ে, যা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।’ এই অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটেছে জেনারেল মোটরসের (জিএম) সিদ্ধান্তেও। প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার প্রথম প্রান্তিকে শক্তিশালী বিক্রির পরও তাদের বার্ষিক পূর্বাভাস বাতিল করেছে এবং বিশ্লেষকদের জন্য নির্ধারিত সম্মেলনও পিছিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না শুল্ক পরিবর্তনের পুরো বিবরণ জানা যায়।
এদিকে, মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক সিএনবিসিকে জানান, তিনি একটি বিদেশি দেশের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করেছেন, যাতে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক পরিকল্পনা আংশিকভাবে স্থায়ীভাবে শিথিল হতে পারে। তবে তিনি দেশটির নাম প্রকাশ করেননি। তিনি বলেন, ‘চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে… তবে তাদের প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ হোয়াইট হাউজ সংশ্লিষ্ট দেশটির নাম প্রকাশে অনীহা দেখালেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারত নিয়ে আশাবাদী মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বিষয়গুলো ভালোই এগোচ্ছে। আমার মনে হয়, ভারতের সঙ্গে একটা চুক্তি আমরা করেই ফেলব।’—’ভারতের সঙ্গে অগ্রগতি হচ্ছে, আমি মনে করি আমাদের একটা চুক্তি হবে।’
এই ঘোষণাগুলোর পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বেড়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ লাভ করে, যা গত নভেম্বরের পর সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রবণতা। বাণিজ্য ঘাটতি ও বিশ্বজুড়ে প্রভাব
ট্রাম্প তার ঘোষিত ৯০ দিনের ‘শুল্ক বিরতি’কালে ৯০টি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করার পরিকল্পনা করছেন। তার লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, যা আমদানি বাড়ায় আরও বেড়েছে। তার কঠোর বাণিজ্যনীতি ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এই ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করা হয় তখন, যখন অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির আশঙ্কায় বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুল্ক শিথিলতা ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের ইঙ্গিত দিলেও অর্থনীতি ও বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ৩৬ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করছেন, যা তার বর্তমান মেয়াদের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এই সপ্তাহেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার প্রশাসনের প্রথম কোয়ার্টার জিডিপি প্রতিবেদন, যেখানে শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব ফুটে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশি পণ্য আগেভাগে আমদানি করায় প্রবৃদ্ধি হার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যেখানে গত প্রান্তিকে তা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ইতিমধ্যেই বড় বড় কোম্পানিগুলো শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ইউপিএস জানিয়েছে, তারা খরচ কমাতে ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে। ক্রাফট হেইঞ্জ ও সুইডিশ কোম্পানি ইলেকট্রোলাক্সও জানিয়েছে, শুল্ক তাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০টি কোম্পানি প্রথম প্রান্তিকের ফলাফল ঘোষণার সময় তাদের লাভের পূর্বাভাস কমিয়েছে। ইলেকট্রোলাক্সের সিইও ইয়ানিক ফিয়ারলিং বলেন, ‘প্রত্যেকটি পূর্বাভাসই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কেউ যদি দাবি করেন যে তিনি শুল্কের ভবিষ্যৎ জানেন, তাহলে আমি অবাক হব।’
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ব্যবসা ও বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা কাটেনি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন