সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ বন্ধের আতঙ্কে পাকিস্তানের কৃষক – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১০:০৮ অপরাহ্ন

সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ বন্ধের আতঙ্কে পাকিস্তানের কৃষক

  • ২৮/০৪/২০২৫

কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানে সিন্ধু নদের পানির প্রবাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের কৃষকরা গভীর উদ্বেগে রয়েছে। ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিসম্পদ চুক্তি বন্ধের ঘোষণা ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে, যা পাকিস্তানের কৃষি, অর্থনীতি ও দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভারত যদি এ হুমকি বাস্তবায়ন করে, তবে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চলে ব্যাপক পানির সংকট সৃষ্টি হবে। এতে সেখানকার কৃষি উৎপাদন ও জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। খবর রয়টার্স। ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিসম্পদ চুক্তি অনুযায়ী, এ নদ থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানি ভাগ করে নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের এ সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশে।

কাশ্মীরে গত সপ্তাহে এক সন্ত্রাসী হামলায় ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানভিত্তিক দুই সন্ত্রাসী এ হামলায় অংশ নিয়েছিল, যার ফলে ২৬ জন নিহত হয়। ভারত হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের কাছে পানি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখবে যতক্ষণ না ইসলামাবাদ ‘আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস’ থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করবে। পানির অভাবে সিন্ধু প্রদেশের লাতিফাবাদ এলাকার কৃষক হোমলা ঠাকুরের পাঁচ একরের খামার এখন বিপদের মুখে। তিনি বলেন, ‘যদি পানি বন্ধ হয়ে যায়, সবকিছু মরুভূমি হয়ে যাবে। পুরো দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ ঠাকুরের মতো হাজার হাজার কৃষক এখন গভীর উদ্বেগে রয়েছেন। কারণ সিন্ধু নদ থেকে তাদের কৃষিকাজের জন্য ৮০ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারত এক রাতের মধ্যে পানি বন্ধ করতে পারবে না। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত শুধু হাইড্রোপাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু বড় আকারের ড্যাম তৈরি করতে বা পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে কয়েক মাসের মধ্যে ভারত নিজে কৃষির জন্য পানি ব্যবহার করতে শুরু করতে পারে। এছাড়া দেশটি বড় আকারে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা আগামী ৪-৭ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। ভারত এরই মধ্যে পাকিস্তানকে নদীপ্রবাহের তথ্য ও বন্যা সতর্কতা প্রদান বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান এখন এ তথ্য ছাড়াই পানির প্রবাহ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, যা বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, পানি সংকট শুধু কৃষিতে নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সংকট তৈরি করতে পারে, যা পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতির জন্য আরো বিপদ ডেকে আনবে। অক্সফোর্ড পলিসি ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদ ভাকর আহমেদ বলেন, ‘পাকিস্তান অনেক দিন ধরেই পানির ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা করেছে। এখন এটি ঠিক করার সুযোগ রয়েছে।’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পানির এ সংকট নতুন এক চাপ সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, পানির প্রবাহ বন্ধ করলে তা ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ সংকটের কারণে ৬০ বছর ধরে চলা সিন্ধু পানিসম্পদ চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us