আগামী জুনেই স্থানীয়ভাবে সংযোজিত প্রথম মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার দেশের বাজারে আসতে পারে।
গাজীপুরের কাশিমপুরে র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে স্থাপিত র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গাড়ি কারখানায় পরীক্ষামূলকভাবে মিতসুবিশি ও প্রোটনের গাড়ি রংকরণ এবং সংযোজন (অ্যাসেম্বল) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাপানি মানসম্পন্ন এই গাড়ি কারখানাটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী জুনেই স্থানীয়ভাবে সংযোজিত প্রথম মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার দেশের বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন র্যানকনের অটোমোটিভ ডিভিশনের বিপণন প্রধান মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকার যেহেতু স্থানীয়ভাবে গাড়ি উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের শুল্ক কমিয়েছে, আমরা আশা করছি মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডারের দাম অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।’
বর্তমানে আমদানিকৃত এই সাত আসনের মাল্টি-ইউটিলিটি যানটির দাম প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। তবে শুল্ক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০২৩ সালে দেশীয় ফেয়ার টেকনোলজিস কোরিয়ান ব্র্যান্ড হুন্ডাই ক্রিয়েটা গাড়ি সংযোজন করে বাজারজাত করে—যার বার্ষিক বিক্রি এক হাজার ইউনিট ছাড়ায়। ফাহিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাংলাদেশি কারখানায় তৈরি এক্সপ্যান্ডার গাড়িটি সাশ্রয়ী মূল্যে পেয়ে অনেক পরিবারই আগ্রহী হবে।’ এ সময় তিনি রঙ করাসহ প্রতিটি যন্ত্রাংশের সংযোজনে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন। র্যানকনের কারখানায় রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পেইন্ট শপ, অ্যাসেম্বলি শপ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল শপ এবং ম্যাটেরিয়াল ওয়্যারহাউস। সংযোজন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে বৈদ্যুতিক ও নিউমেটিক টুলস, জিব ও ওভারহেড ক্রেইন, টর্ক রেঞ্চ এবং টু-পোস্ট ও ফোর-পোস্ট লিফট।
ফাহিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষাগার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে। এখানে আছে থ্রি-ডি হুইল অ্যালাইনমেন্ট, ব্রেক ফোর্স ও এবিএস টেস্টার, এভিএম ও এডিএএস ক্যালিব্রেটর, হুইল ব্যালান্সিং, এমিশন টেস্টার এবং নিজস্ব আড়াই কিলোমিটারের দীর্ঘ টেস্ট ট্র্যাক।’ এই কারখানার পরীক্ষাগারটিই দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি পরীক্ষার ট্র্যাক—২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পরীক্ষামূলক ট্র্যাকে প্রতিটি গাড়িকে ১৬টি বড় প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে চালিয়ে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডারের পাশাপাশি প্রোটন এক্স৭০-এর সংযোজন ও রঙ করার কাজ চলছে। এছাড়া মার্সিডিজ অনুমোদিত বাণিজ্যিক গাড়ি লাইন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মার্সিডিজ ওএফ১৬২৩ বিলাসবহুল বাস এবং জেএসি ডি৮৭০১ ট্রাক সংযোজন সফলভাবে শেষ হয়েছে। সামনে প্রোটন এক্স৯০, জ্যাক টি৮, জ্যাক টি৯ এবং কিছু এমজি মডেলের গাড়িও সংযোজন করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কারখানায় বর্তমানে কাজ করছেন ২৫০ জনের বেশি প্রশিক্ষিত কর্মী, যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রায় ২ হাজার মিতসুবিশি, ৪০০ প্রোটন, ৩৬০ মার্সিডিজ বাস এবং ৬০০ জেএসি ট্রাক বাজারজাত করার জন্য। এছাড়া প্রায় ৫৭ একরের র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে র্যানকন গ্রুপের আরও দুটি কোম্পানি সুজুকি মোটরসাইকেল এবং তোশিবা, এলজি ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন করছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন