মঙ্গলবার টেসলা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে গাড়ি বিক্রি থেকে তাদের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কমে গেছে এবং লাভ ৭০ শতাংশের বেশি কমেছে।
টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানির মুনাফা ও রাজস্ব পতন হওয়ায় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে তার ভূমিকা কমাবেন। মাস্ক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর থেকেই টেসলার বিক্রি কমে যায় এবং কোম্পানি বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়। খবর বিবিসি’র। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) টেসলা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে গাড়ি বিক্রি থেকে তাদের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কমে গেছে এবং লাভ ৭০ শতাংশের বেশি কমেছে। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেছে, এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং তারা কোনো উন্নতির পূর্বাভাস দিচ্ছে না, কারণ ‘রাজনৈতিক মনোভাবের পরিবর্তন’ চাহিদাকে বড় আকারে প্রভাবিত করতে পারে।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা নিয়ে তৈরি হওয়া অসন্তুষ্টির মধ্যেই টেসলার সাম্প্রতিক পতন ঘটেছে। মাস্ক নিজেও স্বীকার করেছেন, এতে তার মনোযোগ কোম্পানি থেকে দূরে সরে গেছে। ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের জন্য মাস্ক ২৫ কোটি ডলার বেশি অনুদান দেন। তিনি মাস্ক সরকারের ব্যয় কমাতে এবং কর্মীসংখ্যা কমানোর জন্য ট্রাম্পের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডোগ)’ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেছেন, পরের মাস থেকে ‘ডোগ’ এ তার সময় দেওয়া অনেক কমে যাবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘যতদিন প্রেসিডেন্ট চাইবেন এবং এটি কার্যকরী হবে, আমি সপ্তাহে এক বা দুই দিন সরকারি কাজে সময় দেব।’
তার রাজনৈতিক অংশগ্রহণে বিশ্বজুড়ে টেসলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং বয়কট হয়েছে। তিনি বলেছেন, এর জন্য দায়ী তারা, যারা ‘আমাকে এবং ডোগ দলকে আক্রমণ করতে চায়’। তবে তিনি জানান, ডোগে তার কাজ ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘সরকারের কাজ প্রায় শেষ’।
নতুন হিসাব অনুযায়ী, টেসলা গত ত্রৈমাসিকে ১৯.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ কম। এটি বিশ্লেষকদের পূর্বের অনুমান করা ২১.১ বিলিয়ন ডলার থেকে কম। বর্তমানে টেসলা পণ্যের দাম কমিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে। ট্রাম্পের চীনের ওপর শুল্ক আরোপ টেসলার জন্য চাপ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। যদিও টেসলার গাড়ি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি, তবে এটি চীনে তৈরি অনেক উপাদান ব্যবহার করে। কোম্পানির মতে, ‘বাণিজ্য নীতি’ তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং খরচ বাড়াতে পারে। টেসলা বলেছে, ‘এই পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আমাদের পণ্যের চাহিদা কমতে পারে।’
এদিকে, মাস্ক বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে মতবিরোধে জড়িয়েছেন। তার মধ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোও রয়েছেন। এই মাসের শুরুতে, মাস্ক নাভারোকে ‘বোকা’ বলে সমালোচনা করেন, কারণ নাভারো টেসলা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। নাভারো বলেছিলেন, মাস্ক ‘গাড়ি নির্মাতা নন’, তিনি ‘অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির সংকলক’। মঙ্গলবার মাস্ক বলেন, টেসলা শুল্কের প্রভাব সবচেয়ে কম পাচ্ছে, কারণ তাদের সরবরাহ চেইন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং চীনে স্থানীয়ভাবে রয়েছে। তবে তিনি বলেন, শুল্ক ‘এমন একটি কোম্পানির জন্য কঠিন, যেখানে মুনাফা কম’। তিনি বলেন, ‘আমি কম শুল্কের পক্ষে কথা বলব, বেশি শুল্কের নয়। কিন্তু এর বেশি আমার হাতে নেই।’
টেসলা জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে তাদের প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। তবে বিনিয়োগকারীরা এই যুক্তি নিয়ে অতীতে অবিশ্বাসী ছিল। মঙ্গলবার বাজার বন্ধ হওয়ার সময়, কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ৩৭ শতাংশ কমেছে। তবে ফলাফলের পর শেয়ারের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছে।
এ.জি. বেলের বিনিয়োগ বিশ্লেষক ড্যান কোটসওর্থ বলেন, টেসলার প্রত্যাশা ‘নিম্নস্তরে’ গিয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ কোম্পানি এই মাসের শুরুতে জানিয়েছিল যে ত্রৈমাসিকে গাড়ির বিক্রি ১৩ শতাংশ কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, টেসলা এখন কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হলে ঝুঁকি বাড়বে। ড্যান বলেন, ‘টেসলার সমস্যা বাড়ছে।’
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন