চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীনের স্মার্টফোন বাজার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। এ সময় দেশটি ৭ কোটি ১৬ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন রফতানি করেছে বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি)। এদিকে বৈশ্বিক বাজারে একই সময় স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। চীনের এ অর্জনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
স্মার্টফোন বাজারে চীনের এ প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে জানুয়ারিতে শুরু হওয়া সরকারি ভর্তুকি ও বসন্ত উৎসব ঘিরে বাড়তি চাহিদা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃত চাহিদা বাড়াতে ভর্তুকিটির প্রভাব প্রত্যাশার চেয়ে কম দেখা গেছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, জটিল বরাদ্দ প্রক্রিয়া ও তুলনামূলকভাবে কম ভর্তুকির পরিমাণকে।
আইডিসি এশিয়া-প্যাসিফিকের ক্লায়েন্ট ডিভাইস বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ম্যানেজার উইল ওয়ং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য উত্তেজনা বাজারে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবে আশার কথা হলো বছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাকি সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছে।’ তিনি জানান, প্রায় এক দশক পর শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করে আবারো নজর কেড়েছে শাওমি। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সরকারি ভর্তুকি, যা মূল্য সচেতন গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আইডিসির তথ্যমতে, চীনের বাজারে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে শাওমি। এ সময়ের প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৩৩ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন রফতানি করে চীনের বাজারে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ হিস্যা দখল করেছে। গত বছরের প্রথম তিন মাসে স্মার্টফোন রফতানির পরিমাণ ছিল ৯৫ লাখ ইউনিট। অন্যদিকে অ্যাপল চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজারে পিছিয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিষ্ঠানটির উচ্চমূল্যের কারণে সরকারি ভর্তুকির সুফল আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে স্থানীয় কম দামি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে অ্যাপল।
প্রথম প্রান্তিকে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে অ্যাপল, যা গত বছর ছিল ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময় তারা ৯৮ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন রফতানি করে। গত বছরের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। ফলে প্রতিষ্ঠানটির চীনের বাজারে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৯ শতাংশ। এদিকে অন্যান্য ব্র্যান্ডের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৪ শতাংশ। একই সময় ১ কোটি ৪০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন রফতানি করে স্থানীয় অন্য ব্র্যান্ডগুলোর হিস্যা দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আইডিসি চায়নার সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট আর্থার গো বলেন, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক চীনের স্মার্টফোন বাজারে ধারাবাহিকভাবে ষষ্ঠ প্রবৃদ্ধির প্রান্তিক। তবে ভর্তুকির পরিমাণ ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা ভোক্তাদের চাহিদা প্রত্যাশার তুলনায় কমিয়ে দিয়েছে।’ ভবিষ্যতের দিক বিবেচনায় বিশ্লেষকদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য উত্তেজনা আরো বাড়লে স্মার্টফোনের উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। পাশাপাশি ভোক্তাদের বাজেট আরো সংকুচিত হতে পারে। তবে শাওমির মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো সরকারি কৌশল ও বাজার চাহিদার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে সুযোগ তৈরি করতে পারে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন