আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: অন্য দেশকে পাল্টা হুঁশিয়ারি চীনের – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন

আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: অন্য দেশকে পাল্টা হুঁশিয়ারি চীনের

  • ২২/০৪/২০২৫

নতুন করে বিশাল শুল্ক আরোপ এড়াতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করার জন্য অন্য দেশকে চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন। এদিকে বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘তুষ্ট’ করতে দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে চীন । ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মাসের শুরুতে ট্রাম্পের ঘোষণা করা শুল্ক এড়াতে চাইলে দেশগুলোকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই চীনও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলো। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, নতুন মার্কিন শুল্ক কার্যকর না করা সাপেক্ষে কয়েক ডজন দেশ তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে চায়। চীন ছাড়া অন্য সব দেশের জন্য নতুন শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি করা পণ্যে আরোপ করা হয়েছে মোট ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত মার্কিন শুল্ক। বেইজিংও আমদানি করা মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। সোমবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য় করেছে এই বলে- তুষ্টি শান্তি আনবে না এবং আপসকে সম্মান করা হবে না।
অন্যান্য দেশগুলোকে “অন্যদের ক্ষতি করে সাময়িক স্বার্থপরতা” করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে চীন। বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে, এমন কাজ কোনো দেশ করলে, চূড়ান্তভাবে সেটা দুই দিক থেকেই ব্যর্থ হবে এবং অন্যদের ক্ষতি করবে। চীনের স্বার্থের বিনিময়ে (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) কোনও চুক্তিতে পৌঁছানো যে কোনও পক্ষের (দেশের) দৃঢ় বিরোধিতা করে চীন। এইভাবে কাজ করা যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে “দৃঢ়ভাবে পারস্পরিক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ” করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছে চীন।
এই মাসের শুরুতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার বলেছিলেন, নতুন শুল্ক এড়াতে প্রায় অর্ধশত দেশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ট্রাম্প বলেছিলেন, তার ঘোষিত নতুন শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করবে। এরপর থেকে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসাবে মার্কিন সয়াবিন এবং চাল আমদানি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে জাপান। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে যে তারা একটি পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছে। এই রূপরেখায় যৌথ উদ্যোগের জাহাজ এবং পাইপলাইন নির্মাণের পাশাপাশি নতুন মার্কিন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ক্রয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আলোচনার ভিত্তি হিসাবে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। অন্যদিকে তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, মার্কিন খাদ্য ও পণ্য আমদানি বৃদ্ধি এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি কমানোর পরিকল্পনা করছে দেশটি। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স সোমবার ভারতে চার দিনের সরকারি সফর শুরু করছেন। এই দুই দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তি করার লক্ষ্যে কাজ করছে। আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৩ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন আমদানির উপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক স্থগিত করেছে। ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাকবিতণ্ডা সত্ত্বেও, ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে শুল্ক নিয়ে চীনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছিলেন, “হ্যাঁ, আমরা চীনের সঙ্গে কথা বলছি। আমি মনে করি আমরা চীনের সঙ্গে খুব ভালো চুক্তি করতে যাচ্ছি।” বেইজিং এখনো আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি এবং বাণিজ্য যুদ্ধে ‘শেষ পর্যন্ত’ লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রাম্পের এই শুল্ক বহাল থাকলে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, মার্কিন বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ পাবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা দিন দিন খারাপ হওয়ায় চীনের ওপর একক নির্ভরশীলতা কমিয়েছে অনেক দেশই। সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আনার ফলে অনেক দেশ এরইমধ্যে উপকৃতও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন জ্বালানি চুক্তি করে এশিয়ার প্রতিবেশীরা বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক চীনকেও আরো ব্যয়বহুল এবং কম নির্ভরযোগ্য উৎসের উপর নির্ভর করতে বাধ্য করতে পারে। বেশিরভাগ দেশই গত ২০ বছরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে এবং আরো বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জোট আসিয়ান ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ($৩৯৮ বিলিয়ন) তুলনায় চীনের সাথে দ্বিগুণেরও বেশি বাণিজ্য করেছে। চীন-ভিত্তিক নীতি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান প্লেনামের অংশীদার বো ঝেংইয়ুয়ান ডিডাব্লিউকে বলেন, “বাস্তবতা হলো, কেউই পক্ষ নিতে চায় না। যদি দেশগুলোর বিনিয়োগ, শিল্প অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ভোগের ক্ষেত্রে চীনের উপর উচ্চ নির্ভরতা থাকে, তাহলে আমার মনে হয় না তারা মার্কিন চাহিদা মেনে নেবে।” সূত্র: ডিডাব্লিউ, এএফপি, রয়টার্স

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us