আমেরিকাকে হারানো গৌরব ফেরাতেই বেশির ভাগ দেশের উপরে চড়া হারে শুল্ক চাপানোর কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তা ঘোষণার ফল হল উল্টো। দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্ব জুড়ে প্রায় সমস্ত স্থানীয় মুদ্রার দামকে টেনে নামিয়ে টানা চড়তে থাকা আমেরিকান ডলার আরও বেশি গতিতে পড়তে শুরু করল। কয়েক মাস যাবৎ তা বিভিন্ন মুদ্রার সাপেক্ষে ধীরে ধীরে নামছিল। ভারতীয় টাকার নিরিখেও হালে নেমেছে বেশ খানিকটা নীচে। বৃহস্পতিবার ২৬ পয়সা পড়ে ১ ডলার হয় ৮৫.৩৮ টাকা। সারা সপ্তাহ দাম পড়েছে। যার মানে, ডলারের চাহিদা কমেছে। লগ্নিকারীরা তা কম কিনছেন ও বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আমেরিকার প্রতি আস্থা কমাচ্ছে? তাই ভরসা কমছে ডলারের উপর থেকেও?
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অথচ ডলার অনেকটা সোনার মতো। অন্যতম সুরক্ষিত লগ্নির জায়গা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলেই যাঁরা শেয়ার-ঋণপত্র ছেড়ে সোনা বা ডলারে ঝোঁকেন, তাঁরা হঠাৎ আমেরিকার মুদ্রা থেকে মুখ ফেরালেন কেন, এই প্রশ্নে ধন্দ বাড়ছে। শুল্ক বসিয়ে
আমেরিকা নিজেই নিজের আর্থিক মন্দা ডাকছে কি না, মাথা তুলেছে সেই আশঙ্কাও। এমনিতে মুদ্রার দাম রোজই ওঠেপড়ে। কিন্তু হালে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের টানা পতন সন্দেহজনক ঠেকছে অনেকের কাছে। তাঁরা বলছেন, এতে আর্থিক ব্যবস্থায় দোলাচল বাড়বে। আমেরিকার পক্ষে কম সুদে ধার নেওয়ার সুযোগ কমবে। আমেরিকার মতো দেশ সঙ্কটের খাদে পড়লে গা বাঁচাতে পারবে না কেউই। তথ্য বলছে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে ডলারের দর পড়েছে ৯%। শুধু এপ্রিলের শুরু থেকেই ইউরো, পাউন্ডের সাপেক্ষে তা নেমেছে ৫%, ইয়েনের সাপেক্ষে পতন ৬%।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যারি আইশেনগ্রিন, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের বেন স্টিলের মতো অর্থনীতিবিদদের বেশির ভাগেরই মতে, শক্তিশালী ডলারের কারণেই আমেরিকার ঋণে সুদ কম হয়। ফলে জিডিপি-র সাপেক্ষে ১২০% ঘাটতি থাকলেও, তাদের বন্ডের চাহিদা থাকে। তার উপরে বিশ্ব বাণিজ্য ডলারেই হয় বলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতেও ট্রাম্পের দেশের নিয়ন্ত্রণ বেশি। তাঁদের মতে, সেই ডলারেই লগ্নিকারীরা আস্থা হারালে চোট খেতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। যা বিশ্বে প্রভাব ফেলবে। ইতিমধ্যেই শুল্কের জেরে আর্থিক মন্দার আশঙ্কা চেপে বসেছে সেখানে।
একাংশ মনে করাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ব্রাজিলের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইউয়ানে বাণিজ্যের পথে হাঁটছে চিন। ভারতের মতো অনেক দেশ ডলারে বাড়তি নির্ভরশীলতা কমাতে চায়। ফলে এখনই তার বিকল্প না মিললেও, ছবিটা বদলে যাওয়া অসম্ভব নয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন