চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, কে কার কাছ থেকে কী কেনে – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, কে কার কাছ থেকে কী কেনে

  • ১৯/০৪/২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ২০২৪ সালে ৪৩৯ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে। এর বিনিময়ে চীনের কাছে তারা বিক্রি করেছে ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য। এই যে কেনা ও বেচার মাঝে ২৯৫ বিলিয়ন বা ২৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ব্যবধান, সেটাই হলো দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যঘাটতি।
এই ঘাটতি মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর অর্থ হলো, চীনের যেসব পণ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হবে, সেগুলো কিনতে এখন মূল দামের চেয়ে ২ দশমিক ৪৫ গুণ বেশি দাম দিতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পণ্য এখন আরও দামি হবে। ফলে চীনের পণ্য এখন মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। চীনও অবশ্য বসে নেই; তারাও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যকার এই ‘ইটের বদলে পাটকেল মারার’ নীতির কারণে যা ঘটবে তা হলো, বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি। পরিণামে স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর ও জামা–কাপড়ের দাম ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। সেই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে কী বিক্রি করে
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে ১৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। তারা চীনের কাছে যেসব পণ্য বিক্রি করেছে, সেগুলো হলো খনিজ তেল, তেলবীজ, যন্ত্র ও বিমান। একক পণ্য হিসেবে দেখা যায়, চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে সয়াবিন। সয়াবিন মূলত শূকরের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দেখে নেওয়া যাক, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে মূলত আর কোন কোন পণ্য বিক্রি করেছে:
খনিজ তেল (১৩.৪ বিলিয়ন): চীনের কাছে খনিজ তেল বিক্রি করেছে ১৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৪০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির ১০ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল এই খনিজ।
তেলবীজ ও তেলযুক্ত ফল (১১.৫ বিলিয়ন ডলার): গত বছরে চীনের কাছে মোট ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের তেলবীজ ও তেলযুক্ত ফল বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈদ্যুতিক যন্ত্র, সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ (১১.৫ বিলিয়ন): গত বছরে চীনের কাছে মোট ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের এসব সরঞ্জাম বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি তার মোট রপ্তানির ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর, বয়লার ও যন্ত্রপাতি (১০.৫ বিলিয়ন): এসব উপাদান বিক্রি করেছে মোট ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। বিমান, মহাশূন্যযান ও যন্ত্রাংশ (১০.২ বিলিয়ন ডলার): এসব সরঞ্জাম বিক্রি করেছে ১ হাজার ২০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
চীনের কাছ থেকে কী কেনে যুক্তরাষ্ট্র

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ৪৩৯ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে। মূলত দেশটির কাছ থেকে স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও চিপ কিনে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ (১২৩.৮ বিলিয়ন) : চীনের কাছ থেকে দেশটি গত বছর ১২ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে; মোট রপ্তানির যা প্রায় ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর, বয়লার, যন্ত্র ও যান্ত্রিক সরঞ্জাম (৮২ বিলিয়ন): গত বছর চীনের কাছ থেকে এসব পণ্য কিনেছে ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের; মোট আমদানির ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
খেলনা, গেম ও ক্রীড়াসামগ্রী (৩০ বিলিয়ন): চীন এসব সরঞ্জাম কিনেছে মোট ৩ হাজার কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। প্লাস্টিক (১৯.৩ বিলিয়ন): চীনের কাছ থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এসব পণ্য কিনেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের; মোট রপ্তানির যা প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
আসবাব, বিছানাপত্র ও কুশন (১৮.৫ বিলিয়ন): যুক্তরাষ্ট্র এসব জিনিস কেনে মোট ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের; মোট আমদানির যা প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় ও টেক্সাস; এসব রাজ্য যথাক্রমে ১২২ দশমিক ৭৬ বা ১২ হাজার ২৭৬ কোটি ডলার, ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার ও ৩৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে।
সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে টেক্সাস; তারা মোট ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ক্যালিফোর্নিয়া; তারা মোট রপ্তানি করে ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য। তৃতীয় স্থানে আছে ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্যে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us