বিচ্ছেদের সময় মাস্কের কাছে তাদের বাড়ি, সন্তানদের ভরণপোষণের খরচ, টেসলার ১০ শতাংশ ও স্পেসএক্সের ৫ শতাংশ শেয়ার, নগদ ৬ মিলিয়ন ডলার এবং একটি টেসলা রোডস্টার গাড়ি দাবি করেছিলেন জাস্টিন। যদি তিনি এগুলো পেতেন। বহু বছর আগে যখন ইলন মাস্কের কোনো নামডাক ছিল না, যখন তিনি ছিলেন কেবল এক সম্ভাবনাময় তরুণ উদ্যোক্তা, সে সময় জাস্টিন উইলসন নামে এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে ছিলেন মাস্ক।
বিশ্বের অন্যতম বিলিয়নিয়ার মাস্কের প্রথম স্ত্রী ছিলেন কানাডিয়ান বংশোদ্ভুত উপন্যাসিক জাস্টিন উইলসন মাস্ক। ২০০০ সালে তারা বিয়ে করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে ছিলেন। এই সময়ে তাদের ঘরে ছয় সন্তানের জন্ম হয়। তাদের প্রথম সন্তান শিশু বয়সেই মারা যায়। এরপর তার স্ত্রী একবার যমজ ও পরে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। আর তার সাবেক স্ত্রী জাস্টিন একজন কোটিপতি। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, জাস্টিনের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার। যেখানে মাস্কের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৬৪ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে জাস্টিনের সম্পদের পরিমাণ মাস্কের সম্পদের ২৪ হাজার ভাগের ১ ভাগ মাত্র।
মাস্কের সন্তান সংখ্যা ১৪ জন, যাদের মায়েদের সংখ্যা অন্তত চারজন।
সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্ক তার এক ছেলের মা অ্যাশলি সেন্ট ক্লেয়ারকে সন্তানের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য এককালীন ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রতি মাসে এক লাখ ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। তবে ক্লেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পরপরই মাস্ক সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে নেন। তাদের সেই সন্তানের নাম ছিল ‘রোমুলাস’। কানাডার অন্টারিওতে কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় জাস্টিনের সঙ্গে মাস্কের পরিচয় হয়। জাস্টিনও ওই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনা শেষে জাস্টিন ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিলিকন ভ্যালিতে চলে যান। সেখানে তাদের মধ্যে আবারও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে মাস্ক ও জাস্টিন একটি অ্যাপার্টমেন্টে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সে সময় মাস্ক সফটওয়্যার কোম্পানি জিপ২ তৈরির কাজ করছিলেন। মাস্ক তার ভাই কিমবাল ও বন্ধু গ্রেগ কোরিকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৫ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৯ সালে মাস্ক ও তার সহপ্রতিষ্ঠাতা জিপ২ কোম্পানিটি কমপ্যাকের কাছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন। সেই টাকার মধ্যে মাস্ক পান প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার। এই টাকায় তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার পালো অল্টোতে ১ হাজার ৮০০ স্কয়ারফুটের একটি কনডো ও এক মিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন। সেই গাড়িটি বাড়িতে আনার সময় জাস্টিনকে মাস্কের পাশে দেখা গিয়েছিল।
সে সময় জাস্টিন সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘একটা গাড়ির জন্য এক মিলিয়ন ডলার! এটা খুব বেশি।’
এর পরের বছর মাস্ক ও জাস্টিনের বিয়ে হয়। ২০০২ সালের মধ্যে তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। সেখানে মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স। দুই বছর পর ২০০৪ সালে তিনি টেসলায় বিনিয়োগ করেন এবং (পরিচালনা) বোর্ডে যোগ দেন।
২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে জাস্টিন ছয় ছেলের জন্ম দেন। মাস্কের সঙ্গে বিয়ের পর জাস্টিন লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে তার তিনটি উপন্যাস প্রকাশ হয়। টেসলার প্রধান নির্বাহী হওয়ার মাস কয়েক আগে ২০০৮ সালের বসন্তে জাস্টিনের সঙ্গে মাস্ক বিচ্ছেদ চান। এর চার বছর পর ২০১২ সালে ফোর্বসের বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় জায়গা করে নেন মাস্ক। জাস্টিনের সঙ্গে বিচ্ছেদের ছয় সপ্তাহ পর পরবর্তী স্ত্রীর সঙ্গে মাস্কের বাগদান সম্পন্ন হয়।
বিচ্ছেদের সময় মাস্কের কাছে তাদের বাড়ি, সন্তানদের ভরণপোষণের খরচ, টেসলার ১০ শতাংশ ও স্পেসএক্সের ৫ শতাংশ শেয়ার, নগদ ৬ মিলিয়ন ডলার এবং একটি টেসলা রোডস্টার গাড়ি দাবি করেছিলেন জাস্টিন। যদি তিনি এগুলো পেতেন, তবে আজ তার সম্পদের পরিমাণ হতো ১৭.৩ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী সেক্ষেত্রে তিনি হতেন বিশ্বের ১১৩তম ধনী। জাস্টিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাস্ক তাকে ৮০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেন। কিন্তু জাস্টিন সেটা প্রত্যাখ্যান করেন। বরং তিনি টেসলার শেয়ার ও স্পেসএক্সে অংশীদার হতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সেগুলোর কিছুই পাননি। বরং মাস্কের প্রথম প্রস্তাবের চেয়েও অনেক কম অর্থ নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
মাস্ক দাবি করেন, করের অর্থ বাদ দিয়ে সবমিলিয়ে জাস্টিন ২০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছিলেন, যার মধ্যে অর্ধেক অর্থ ছিল তাদের বেল এয়ারের বাড়িটির মূল্য। মাস্ক আরও দাবি করেন, ঘরের যাবতীয় খরচসহ সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচও তিনিই বহন করতেন।
তবে জাস্টিন বাড়িটি বিক্রি করে ১০ মিলিয়ন ডলার পাননি। রেকর্ড অনুযায়ী, তিনি ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে তাদের সাড়ে ৬ হাজার বর্গফুটের ম্যানশনটি সাড়ে ৬ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন। এক মাস পর, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪ হাজার ৯০০ বর্গফুটের একটি ছোট বাড়ি ৪.৩ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেন। এখন সেই বাড়িটির মূল্য ৮ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বেল এয়ারের বাড়ি বিক্রি করে জাস্টিন যেই প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ হাতে পেয়েছিলেন, তা যদি তিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতেন, তাহলে আজ সেটার মূল্য হতো প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন ডলার। ফোর্বস এই বিষয়ে জানতে চাইলেও জাস্টিন বা মাস্কের পক্ষ থেকে কেউ সাড়া দেননি। জাস্টিনের সঙ্গে বিচ্ছেদের আবেদন করার কিছুদিন পরেই মাস্কের সঙ্গে পরিচয় হয় ব্রিটিশ অভিনেত্রী টেলুলাহ রাইলির সঙ্গে। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়েন। ২০১৮ সালে একটি সাক্ষাৎকারে রাইলি বলেছিলেন, ‘একে অপরকে জানার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের বাগদান হয়। তখন আমার বয়স ছিল ২২ বছর। মাস্ক সবচেয়ে অদ্ভুত ও আকর্ষণীয় মানুষদের একজন।’
মাস্ক ও রাইলির দুইবার বিয়ে হয়েছিল। প্রথমবার ২০১০ সালে। ২০১৩ সালে তারা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। প্রথমবার বিয়ের পর ২০১২ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে ছিলেন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে ছিলেন। এ সময়ে তাদের কোনো সন্তান হয়নি। বলা হয়ে থাকে দুবার বিচ্ছেদ মিলিয়ে রাইলিও জাস্টিনের মতোই অর্থ পেয়েছিলেন। এরপর আর বিয়ে না করলেও মাস্ক দীর্ঘদিন সঙ্গীতশিল্পী গ্রিমসের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। তাদের ঘরে তিনটি সন্তান রয়েছে। এছাড়াও মাস্কের নিউরালিঙ্ক-এর এক্সিকিউটিভ শিভন জিলিসের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছে। তাদের চারটি সন্তান। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, জিলিস টেক্সাসের একটি আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে থাকেন। মাস্ক চেয়েছিলেন এই বাড়িতে তার সব সন্তান ও তাদের মায়েরা একসঙ্গে বসবাস করবেন।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন