সিলিকন সিক্সঃ এক দশকে ২৭৮ বিলিয়ন ডলার কর ফাঁকির অভিযোগ – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

সিলিকন সিক্সঃ এক দশকে ২৭৮ বিলিয়ন ডলার কর ফাঁকির অভিযোগ

  • ১৬/০৪/২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বড় প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যামাজন, মেটা, অ্যালফাবেট, নেটফ্লিক্স, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট ‘সিলিকন সিক্স’ নামে পরিচিত। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গত এক দশকে ২৭৮ বিলিয়ন বা ২৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার কর ফাঁকির অভিযোগ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ফেয়ার ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের (এফটিএফ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
এফটিএফ বলছে, ১০ বছরে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন, মেটা, অ্যালফাবেট, নেটফ্লিক্স, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট মোট ১১ ট্রিলিয়ন বা ১১ লাখ কোটি ডলার আয় করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এ সময় মুনাফা করেছে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৫০ কোটি ডলার। কিন্তু এসব কোম্পানি গড়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ কর দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ করহারের তুলনায় অনেক কম। দেশটির প্রচলিত করহার অনুযায়ী আরো ২৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার পরিশোধ করার কথা ছিল ছয় কোম্পানিগুলোর।
সিলিকন সিক্স কোম্পানিগুলো কর ফাঁকির কৌশলকে নিজেদের ব্যবসায়িক কাঠামোর অংশ বানিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন এফটিএফের বিশেষজ্ঞরা। অলাভজনক সংস্থাটির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অতীতে কর ফাঁকি সংশোধনের জন্য যে এককালীন কর পরিশোধ করা হয়েছিল, তা বাদ দিলে সিলিকন সিক্স কোম্পানিগুলোর গত এক দশকে গড় কর পরিশোধের হার আরো কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ১০ বছরে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কর দেয়ার পরিমাণ ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার বাড়িয়ে দেখিয়েছে। কাগজে-কলমে বেশি কর দেখালেও বাস্তবে সে অর্থ সরকারকে দেয়া হয়নি। এফটিএফের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে কর হিসেবে এমন কিছু ব্যয় দেখানো হয়েছে, যা আদতে পরিশোধ করা হয়নি। এফটিএফের প্রধান নির্বাহী পল মোনাঘান বলছেন, ‘বড় করপোরেশনগুলো নিজেদের কাঠামোর মধ্যেই কর ফাঁকির ব্যবস্থা রেখেছে। সিলিকন সিক্স প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো মুনাফার যে শতাংশ কর হিসেবে দেয়, তা বিশ্বের অনেক দেশের ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতের চেয়েও অনেক কম। কারণ কর ফাঁকি এখনো বড় কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ হয়ে আছে।’
মোনাঘানের মতে, এসব কোম্পানি ‘আক্রমণাত্মক কর কৌশল’ ব্যবহার করে, যেমন এমন কর খরচ দেখানো, যা প্রকৃতপক্ষে দিতে হয় না। এছাড়া অ্যাপল, মেটা কিংবা মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ওপর প্রভাব ফেলতে লাখ লাখ ডলার খরচ করে লবিংয়ে। এফটিএফের প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ হয়েছে, যখন মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রভাব ও আধিপত্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। অন্যদিকে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে অ্যাপলের টিম কুক ও মেটার মার্ক জাকারবার্গের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি নির্বাহীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রভাবই সম্ভবত তাদের কর ফাঁকি দেয়ার পথ সুগম করে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানীকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে চেয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাজ্য। এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে বড় মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য কর ছাড় দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। মোনাঘান বলেন, ‘‌সিলিকন সিক্স কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করলেও যুক্তরাষ্ট্রে তারা খুব কম কর দেয়। কারণ বিদেশী আয়ের জন্য একটি বিশেষ কর ছাড় রয়েছে।’ এদিকে এফটিএফ বলেছে, কোম্পানিগুলো বিদেশে পণ্য বা সেবা বিক্রিতে খুব বেশি কর দেয় না। কারণ তারা কাগজে-কলমে মুনাফা কম দেখায় বা মুনাফা এমন দেশে দেখায়, যেখানে সরকারের করহার অনেক কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক দশকে মুনাফার তুলনায় সবচেয়ে কম করহার ছিল স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্সের (১৪ দশমিক ৭ শতাংশ)। মাইক্রোসফট সবচেয়ে বেশি দিয়েছে (২০ দশমিক ৪ শতাংশ)। এ সময় অ্যামাজনের কর নীতি সবচেয়ে ভায়াবহ ছিল বলে উল্লেখ করেছে এফটিএফ। কারণ তারা মোট কর দিয়েছে খুবই সামান্য ও যুক্তরাজ্যের আয়ের বড় একটা অংশ দেখিয়েছে কম করের দেশ লুক্সেমবার্গে। তবে অ্যামাজনের করহার ছিল ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, যা নেটফ্লিক্স, মেটা (১৫ দশমিক ৪ শতাংশ) ও অ্যাপলের (১৮ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় বেশি।
অভিযোগের বিষয়ে অ্যামাজনের এক মুখপাত্র জানান, যুক্তরাজ্যে কোম্পানির খুচরা বিক্রির আয়, খরচ, মুনাফা ও কর সবই ওই দেশেই নথিভুক্ত করা হয় এবং সোজাসুজি এইচএম রাজস্ব বিভাগে (এইচএমআরসি) জমা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘সরকারই কর আইন তৈরি করে, আর অ্যামাজন সে আইন অনুযায়ী কাজ করছে ও সব কর পরিশোধ করছে। একই সঙ্গে চাকরি ও অবকাঠামো তৈরিতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে কোম্পানি। কম মুনাফার হার ও বড় বিনিয়োগের কারণে আয় অনুযায়ী করহার স্বাভাবিকভাবেই কম দেখা যায়।’
অন্যদিকে মেটার মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় কর আইন মেনে চলি এবং যেসব দেশে ব্যবসা করি, সেখানে সব প্রয়োজনীয় কর পরিশোধ করা হয়।’ নেটফ্লিক্সের মুখপাত্রও বলেন, ‘সরকার কর আইন ও হার নির্ধারণ করে আর কোম্পানিগুলো তা মেনে চলে। নেটফ্লিক্স প্রতিটি দেশে প্রযোজ্য কর আইন অনুসরণ করে।’ অবশ্য মাইক্রোফফট ও অ্যালফাবেট এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us