এতদিন ধারণা করা হয়েছিল, চলতি বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর বিলাসবহুল পণ্যের বাজার পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ সেই আশা ভেঙে দিয়েছে। এতদিন ধারণা করা হয়েছিল, চলতি বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর বিলাসবহুল পণ্যের বাজার পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ সেই আশা ভেঙে দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক বাড়ায় হ্যান্ডব্যাগ ও হাই-এন্ড ঘড়ির চাহিদায় মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। খবর এফটি।
বিলাসপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদার প্রধান চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কিন্তু দেশ দুটি পরস্পরের পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি আমদানি শুল্ক আরোপ অব্যাহত রেখেছে। এ বাণিজ্য অস্থিরতা বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতিতে ভোক্তা আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
লাক্সারি শিল্পের জন্য আগে দেয়া প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সম্প্রতি সংশোধন করে কমিয়ে এনেছে বিশ্লেষকরা। আগে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও কয়েকদিন আগে বিলাসপণ্য থেকে আয়ের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে বার্নস্টেইন। শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট এক ব্যাংকারের মতে, আগে ধারণা করা হয়েছিল চলতি বছর বিলাসপণ্যের বাজারে পুনরুদ্ধার ঘটবে। কিন্তু এখন যেকোনো ধরনের পুনরুদ্ধারের জন্য ২০২৬ সাল নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে প্রযুক্তিপণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক থেকে সাময়িক ছাড় দেয়া হলেও ট্রাম্প প্রশাসন পরবর্তী সময়ে জানিয়েছে, ভোক্তা ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর আলাদা শুল্ক আরোপ করা হবে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, কোন খাত কীভাবে প্রভাবিত হবে তা আগাম বলা কঠিন। ট্রাম্প শুল্ক পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারেন, এমন আশঙ্কা সামনে রেখে ওই ব্যাংকার বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।’ গত মাসে এলভিএমএইচের সিইও বেহনা আহনোঁ সম্ভাব্য শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন। এর আগে জানুয়ারিতে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘আশাবাদের হাওয়া’ বইছে বলে মন্তব্য করেন এবং দেশটিতে উৎপাদন আরো বাড়ানোর কথাও জানান। বার্কলেসের পূর্বাভাস অনুসারে, এলভিএমএইচের ফ্যাশন ও চামড়ার পণ্য বিভাগে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিক্রি ১ শতাংশ কমবে। তবে পুরো গ্রুপের বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অপরিবর্তিত থাকবে। বার্নস্টেইনের বিশ্লেষক লুকা সোলকার মতে, আগে দেয়া প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এখন অতীত। নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে আর্থিক বাজার ও অর্থনীতিতে পরিমাপযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের অনিশ্চয়তা মন্দার জন্য আদর্শ পটভূমি। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দামি হ্যান্ডব্যাগ ও পানীয় কিনতে প্রচুর খরচ করেছিলেন ক্রেতারা, তখন বিলাসপণ্যের বাজারে রেকর্ড উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা খরচ কমানোয় ও চীনা অর্থনীতি দুর্বল হওয়ায় বাজার মন্দায় আটকে আছে। এ অবস্থায় ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ আরেকধাপ চাপ তৈরি করছে।
এদিকে বেশির ভাগ বিলাসপণ্যের উৎপাদন হয় ফ্রান্স ও ইতালিতে, আর উচ্চমানের ঘড়ি সুইজারল্যান্ডে। যুক্তরাষ্ট্র এখন এসব দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে এবং আগের উচ্চ হার থেকে কিছুটা সরে এসেছে। কিন্তু শুল্ক হারে ট্রাম্পের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন সরবরাহ চেইনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এক নির্বাহী জানান, তার কোম্পানিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনবার শিপমেন্টের ওপর শুল্ক হার পরিবর্তন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আস্থার ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী এবং অনিশ্চয়তা ভোক্তা মনস্তত্ত্বের জন্য ক্ষতিকর।’
এ বছর বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ধস অনেক বিলাসপণ্যের ক্রেতাকে ধাক্কা দিয়েছে। এইচএসবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরওয়ান রামবুর্গের মতে, আর্থিক ক্ষয়ের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিলাসপণ্য খাত। এর আগে এইচএসবিসি পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি বছর লাক্সারি খাতে বিক্রি ২০২৪ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বাড়বে। এখন সংশোধন করে বলছে, এ হার শূন্য। গত বছরের শেষে ব্যাংকের বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা থেকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো লাভবান হবে। এখন তারা বলছেন, ‘সেটা আর হবে না।’ অন্যদিকে ২০২৪ সালের মন্দার পর চীনে ‘সামান্য প্রবৃদ্ধির’ প্রত্যাশাও এখন ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বারকিন ব্যাগের জন্য বিখ্যাত হেরমেস ভালো অবস্থানে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। বার্কলেসের পূর্বাভাস, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে হেরমেসের বিক্রি ৮ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু গুচির সমস্যার কারণে পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে কেরিং। বার্কলেসের পূর্বাভাস অনুসারে, গুচির বিক্রি কমবে ২৫ শতাংশ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন