ইউক্রেনের কাছে রুশ গ্যাস বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ চায় যুক্তরাষ্ট্র – The Finance BD
 ঢাকা     শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন

ইউক্রেনের কাছে রুশ গ্যাস বহনকারী গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ চায় যুক্তরাষ্ট্র

  • ১৩/০৪/২০২৫

এই পাইপলাইনটি রাশিয়ার সুধজা শহর থেকে ইউক্রেনের উঝহোরোদের মধ্য দিয়ে স্লোভাকিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। সোভিয়েত যুগে নির্মিত এই ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন ইউক্রেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ইউরোপের একটি প্রধান জ্বালানি সরবরাহ পথ।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে—যেটি রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রতিবেদনে এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঔপনিবেশিক চাপ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। গত শুক্রবার, ওয়াশিংটন ও কিয়েভের কর্মকর্তারা একটি খনিজসম্পদ বিষয়ক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাইডেন সরকারের দেওয়া অস্ত্রের বিনিময়ে ইউক্রেনকে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে। এই প্রস্তাবের ধারাবাহিকতায় আলোচনা ক্রমেই তিক্ত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত প্রথম খসড়ার চেয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনেক বেশি আগ্রাসী। আগের খসড়ায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ, তেল ও গ্যাসের বিনিময়ে চুক্তির প্রস্তাব ছিল। সর্বশেষ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কর্পোরেশন যেন ইউক্রেনের গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এই পাইপলাইনটি রাশিয়ার সুধজা শহর থেকে ইউক্রেনের উঝহোরোদের মধ্য দিয়ে স্লোভাকিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। সোভিয়েত যুগে নির্মিত এই ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন ইউক্রেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও ইউরোপের একটি প্রধান জ্বালানি সরবরাহ পথ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ইউক্রেনের পাঁচ বছরের গ্যাস চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ইউক্রেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই পাইপলাইন ব্যবহার করে অতীতে দুই দেশই কোটি কোটি ইউরো ট্রানজিট ফি অর্জন করেছিল, এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও। কিয়েভভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজি’র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ভলোদিমির লানদা বলেন, ‘আমেরিকানরা যতটা সম্ভব আদায় করে নিতে চায়। তাদের এই ‘ঔপনিবেশিক’ ধাঁচের চাপ কিয়েভের পক্ষে মানা অসম্ভব।’
গত বছর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রস্তাব দেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ইউক্রেনের অবিকশিত খনিজ খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। তিনি তখন আশা করেছিলেন, এর বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। কিন্তু ট্রাম্প এখন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি বা সামরিক সহায়তা দিতে রাজি নন, বরং বিনিময় ছাড়াই খনিজসম্পদ দাবি করছেন। গত সপ্তাহে তিনি অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি ‘একটি চুক্তি থেকে সরে যেতে চাইছেন’ এবং তিনি যদি সই না করেন, তবে ‘বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন’। এদিকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন আধুনিকায়নের জন্য চুক্তিতে প্রস্তুত, তবে এতে উভয় পক্ষের জন্য ‘সমানভাবে লাভজনক’ হওয়া জরুরি। তার ভাষ্যে, ‘আমি শুধু ইউক্রেনের অধিকার রক্ষা করছি। এটি দুই পক্ষের জন্যই উপকারি হতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বিষয়ে ‘কারিগরি’ আলোচনাও চলছে। এদিকে, ইউক্রেনে মার্কিন বিশেষ দূত কিথ কেলগ জানান, দেশটির সম্ভাব্য বিভাজন নিয়ে তার মন্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দ্য টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বার্লিনের মতো ভাগ করা যেতে পারে।
তবে এক্স (টুইটার) পোস্টে কেলগ বলেন, তিনি একটি ‘সমঝোতা-পরবর্তী রেজিলিয়েন্স ফোর্স’-এর কথা বলেছিলেন, যেখানে রাশিয়ার দখলে থাকা এলাকায় রুশ সেনারা থাকবেন এবং কিয়েভসহ ইউক্রেনের অন্যান্য অংশে থাকবে ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনী। শুক্রবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সেন্ট পিটার্সবার্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উইটকফের প্রস্তাব ছিল, রাশিয়ার দাবিকৃত ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ, যেগুলোর কিছু এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে এবং যেখানে ১০ লাখ মানুষ বাস করে—সেগুলো রাশিয়াকে দিয়ে দেওয়া হোক। একই দিন, ইউক্রেন ডিফেন্স কন্টাক্ট গ্রুপের বৈঠকে কিয়েভের মিত্ররা অতিরিক্ত ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তা ঘোষণা করে। এ সময় তারা পুতিনকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় দেরি করার অভিযোগও তোলে, যা ইউক্রেন ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছে।
শনিবার সকালেই রাশিয়া কিয়েভে আরও বিমান হামলা চালায়। এতে তিনটি গুদাম ধ্বংস হয় এবং আহত হন দুইজন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১১ মার্চের মার্কিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পর রাশিয়া ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২ হাজার ২০০ ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। শনিবার এক বক্তব্যে জেলেনস্কি ২৬ বছর বয়সী এফ-১৬ পাইলট ক্যাপ্টেন পাভলো ইভানভকে শ্রদ্ধা জানান, যিনি একটি সামরিক অভিযানে নিহত হন। প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের ছোট আকাশবাহিনী রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকাতে বীরত্বের সঙ্গে লড়ছে এবং মাটিতে পরিচালিত অভিযানে সহায়তা করছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us