শুল্ক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিপুল পরিমাণে রপ্তানি থাকলেও, সেটি দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ২ শতাংশের সমান ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জবাবে বেইজিং পিছু হটছে না, কারণ চীন মনে করে তা করার প্রয়োজন নেই। চীনা নেতারা জানিয়েছেন, তারা কোনো ‘জুলুমবাজের’ কাছে মাথা নত করতে রাজি নয়, এবং চীনের সামর্থ্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি। খবর বিবিসি’র। শুল্ক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিপুল পরিমাণে রপ্তানি থাকলেও, সেটি দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ২ শতাংশের সমান ছিল। তবে এটাও স্পষ্ট, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়াতে চাইবে না, যখন তারা নিজেরাই দীর্ঘদিনের রিয়েল এস্টেট সংকট, অতিরঞ্জিত আঞ্চলিক ঋণ এবং দীর্ঘস্থায়ী যুব বেকারত্বের মতো বড় অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
তবে, সরকার জনগণকে জানিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ মোকাবেলা করতে সক্ষম। চীন জানে, তাদের আরোপিত শুল্কও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ট্রাম্প তার সমর্থকদের বলছেন, শুল্ক আরোপ করে চীনকে সহজেই মাথা নত করানো যাবে। কিন্তু এটি চূড়ান্তভাবে বিভ্রান্তিকর প্রমাণিত হয়েছে। বেইজিং সহজে আত্মসমর্পণ করবে না। চীনের নেতা শি জিনপিং শুক্রবার দেশটিতে সফররত স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে বলেন, তার দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত ট্রাম্প প্রশাসনের ‘একতরফা দমনমূলক আচরণের’ বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। জবাবে সানচেজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উত্তেজনা যেন ইউরোপের সঙ্গে চীনের সহযোগিতাকে ব্যাহত না করে। বেইজিংয়ে তাদের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরই চীন আবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ায়। যদিও তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তীতে আরও শুল্ক বাড়ালেও চীন তার জবাবে আর নতুন কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
আগামী সপ্তাহে শি জিনপিং মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া সফরে যাবেন। এই দেশগুলো ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনের মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব ও ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বাণিজ্য সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা চালিয়েছেন। এর পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের কথাবার্তা চলছে বলেও জানা গেছে। সেখানে চীনা গাড়ির ওপর ইউরোপীয় শুল্ক তুলে দিয়ে তার বদলে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, যাতে নতুন করে ‘ডাম্পিং’ ঠেকানো যায়। সংক্ষেপে বললে, যেদিকেই তাকানো হোক না কেন, দেখা যাবে চীনের সামনে বিকল্পের অভাব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, দুই পরাশক্তির শুল্ক বাড়ানোর আর কোনো প্রভাব নেই, কারণ তারা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে তাদের মধ্যে অধিকাংশ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ অনেকটাই প্রতীকী রূপ নিয়েছে। গত দুই দিন ধরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাও সে তুং-এর ছবি প্রকাশ করছেন। এছাড়া, কোরীয় যুদ্ধকালীন একটি ভিডিও ক্লিপও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে মাও যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছিলেন, ‘এই যুদ্ধ যত দিনই চলুক না কেন, আমরা কখনোই মাথা নত করব না।’ এই ভিডিওতে মাও নিং নিজেই মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘আমরা চীনা। উসকানিকে ভয় পাই না। আমরা পিছু হটব না।’
চীন সরকার যখন চেয়ারম্যান মাওকে সামনে আনে, তখন বোঝা যায় যে তারা সত্যিই এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন