সাংবাদিক এজরা ক্লেইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রুগম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণাকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ধাক্কা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, যদি নিরাপত্তা আমাদের আসল লক্ষ্য হতো, তাহলে আমরা ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশে শুল্ক আরোপ করতাম না, আর কানাডা ও মেক্সিকোর মতো প্রতিবেশী ও মিত্র দেশগুলোর ওপর তো কোনোভাবেই শুল্ক বসাতাম না। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর পল ক্রুগম্যান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ শুধুমাত্র মার্কিন ভোক্তাদের জন্য খরচ বাড়াবে, সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পল ক্রুগম্যান এ কথা বলেন। সাংবাদিক এজরা ক্লেইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রুগম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণাকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ধাক্কা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ট্রাম্প এখন এমন এক জটিল শুল্কনীতি ঘোষণা করেছেন, যেখানে প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা আলাদা হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, এবং এই হারগুলো তথাকথিত ‘স্মার্ট মানি’ বা যারা নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান ভাবতেন, তাদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি। এখন গড় শুল্ক হার প্রায় ২৩ শতাংশ, যা এক কথায় বিশাল। এই হার এমনকি ১৯৩০ সালের স্মুট-হাউলি ট্যারিফ অ্যাক্ট পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি। অথচ এখনকার সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনীতির অনেক বড় অংশজুড়ে রয়েছে, যা ১৯৩০-এর দশকে ছিল না। সুতরাং, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ধাক্কা—এমনটাই বলা চলে।
ক্রুগম্যান বলেন, বিভিন্ন ধরনের শুল্ক খরচ কতটা বাড়াবে তা একেবারেই স্পষ্ট। অথচ আমাদের চিপস অ্যাক্ট রয়েছে, যার উদ্দেশ্য—অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো স্বনির্ভর করে তোলা। কিন্তু ট্রাম্প বলছেন, এই উদ্যোগটাই নাকি ভয়ঙ্কর। যদি কেউ জানতে চায়, কীভাবে জাতীয় নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক শিল্পনীতি গড়ে তোলা যায়, যার লক্ষ্য হচ্ছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে রাখার—তাহলে তার উদাহরণ হলো চিপস অ্যাক্ট। বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগগুলোই এই ধরনের নীতির বাস্তব রূপ। আদর্শ পরিস্থিতিতে, আমাদের আরো বড় পরিসরে কাজ করা উচিত ছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে পল ক্রুগম্যান বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা জাতীয় নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক শিল্পনীতি গড়ে তোলার ঠিক বিপরীত কাজ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, মার্কিন ভোক্তাদের জীবনযাত্রার খরচ বাড়ায়, এবং জাতীয় নিরাপত্তায় কোনো অবদান রাখে না।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু জিনিস দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনের যৌক্তিকতা আছে, আবার বন্ধুসুলভ দেশগুলোতে কিংবা নিকটবর্তী অঞ্চলে উৎপাদনেরও যৌক্তিকতা আছে—কারণ কাছাকাছি জিনিসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও তুলনামূলক সহজ। যদি নিরাপত্তা আমাদের আসল লক্ষ্য হতো, তাহলে আমরা ভিয়েতনাম বা বাংলাদেশে শুল্ক আরোপ করতাম না, আর কানাডা ও মেক্সিকোর মতো প্রতিবেশী ও মিত্র দেশগুলোর ওপর তো কোনোভাবেই শুল্ক বসাতাম না। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ছিল ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এই খাতে শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাতটি সরাসরি চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশ রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে। তাই এই শুল্কের প্রভাব হতে পারে ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদী।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন