যুক্তরাষ্ট্রে ১০% শুল্ক কার্যকর, ভেঙে পড়ছে বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি – The Finance BD
 ঢাকা     সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রে ১০% শুল্ক কার্যকর, ভেঙে পড়ছে বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি

  • ০৬/০৪/২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শনিবার (৫ এপ্রিল) থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত একতরফা ১০% শুল্ক আদায় শুরু করেছে, যা কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে দেশটির সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও কাস্টমস গুদামগুলোতে এই শুল্ক কার্যকর হয়। এটি মার্কিন আমদানিকারকদের ওপর প্রযোজ্য। আগামী সপ্তাহ থেকে ৫৭টি প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের পণ্যে আরো উচ্চ হারে (১১%-৫০%) শুল্ক বসানো হবে।
ট্রাম্পের সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বর্তমানে হোগান লভেলসের আইনজীবী কেলি অ্যান শ বলেন, এটি আমাদের জীবদ্দশার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পদক্ষেপ। এটা বৈশ্বিক বাণিজ্যের পদ্ধতিতে ভূমিকম্পের মতো পরিবর্তন। প্রথম ধাপে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, সৌদি আরবসহ বহু দেশের পণ্যে ১০% শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যদিও এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল না। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, নীতিমালা সঠিক হলে অনেক দেশের ঘাটতি আরো বড় হতো।
চীনকে দেয়া মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়াবে ৫৪%, কারণ বুধবার থেকে চীনা পণ্যে ৩৪% নতুন শুল্ক বসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য এই হার ২০%, জাপানের জন্য ২৪%, আর ভিয়েতনামের জন্য ৪৬%। এই ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে বিশাল ধস নামে। দুই দিনের মধ্যে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূলধন হারিয়ে যায় এটি রেকর্ড পতন। তেল ও অন্যান্য পণ্যের দামও কমে গেছে। আর বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ হিসেবে দেশটি সব মার্কিন পণ্যে ৩৪% শুল্ক আরোপ করেছে এবং কিছু বিরল খনিজ রফতানিতে কড়াকড়ি শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, চীন আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমাদের সঙ্গে তুলনাই চলে না। এটা একটা অর্থনৈতিক বিপ্লব, এবং আমরা জয়ী হব। শুল্কের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ব্যাপক হারে দেখা গেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কারো জন্যই ভালো না। আমাদের একতাবদ্ধভাবে জনগণ ও ব্যবসাকে রক্ষা করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলছেন, তার সরকার ব্রিটিশ ব্যবসাকে রক্ষায় শিল্প নীতিতে হস্তক্ষেপ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শুল্ক-মুক্ত চুক্তির চেষ্টা করবে। এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭% শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, তাইওয়ান ৩২% শুল্ক মোকাবেলায় প্রযুক্তি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এদিকে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ধনকুবের ইলন মাস্ক বলেছেন, আমি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শূন্য শুল্ক দেখতে চাই। সম্পূর্ণ মুক্ত বাণিজ্যই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
ট্রাম্পের আদেশে ১,০০০ ধরনের পণ্য যেমন ফার্মাসিউটিক্যাল, ইউরেনিয়াম ও সেমিকন্ডাক্টর প্রাথমিকভাবে ছাড় পেলেও ভবিষ্যতে এসব পণ্যে শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কানাডা ও মেক্সিকো আপাতত নতুন শুল্ক থেকে ছাড় পেয়েছে। তবে তাদের নির্দিষ্ট চুক্তির আওতায় ২৫% শুল্ক আগে থেকেই প্রযোজ্য। এই শুল্ক যুদ্ধ কেবল অর্থনীতিতেই নয়, বৈশ্বিক কূটনীতিতেও এক উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি করছে। ট্রাম্প বলছেন এটি ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব’। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন—এই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিকে চরমভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে।
খবর রয়টার্স।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us