মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ২ লাখ ২৮ হাজার কর্মসংস্থান যোগ হয়েছে, যা পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি। ফলে ফেব্রুয়ারিতে নিম্নগামী হওয়া শ্রমবাজার গত মাসে বেশ চাঙ্গা হয়েছে। এর পরও দেশটিতে বেড়েছে বেকারত্বের হার। খবর সিএনএন।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলের প্রথম কয়েক দিনে মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ব্যাপক ও উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বাজারকে পতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে ও বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করেছে। তবে শুক্রবার প্রকাশিত মার্চের চাকরির তথ্যে ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’-এ ঘোষিত শুল্কের প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএলএস) তথ্যানুসারে, মার্কিন অর্থনীতি মার্চে প্রত্যাশার চেয়েও শক্তিশালী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এ মাসে শ্রমবাজারে যোগ হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার কর্মসংস্থান, যা ফেব্রুয়ারির নিম্নগামী ১ লাখ ১৭ হাজার কর্মসংস্থানের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। যদিও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির দাবানল এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মার্চে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্লাটফর্মে এ সফলতা তুলে ধরে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘চাকরির সংখ্যা দুর্দান্ত, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো, এটি এরই মধ্যে কাজ করছে।’
তবে কর্মসংস্থান বাড়লেও এ সময়ে বেড়েছে বেকারত্ব। মার্চে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ১ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। যার অন্যতম কারণ বাজারে নতুন কর্মপ্রত্যাশীদের প্রবেশ। সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্য কনফারেন্স বোর্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডানা পিটারসন জানিয়েছেন, ‘মার্চের কর্মসংস্থানের তথ্য শুল্কসম্পর্কিত ঝড়ের আগে শান্ত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রেসিডেন্টের শুল্ক পদক্ষেপ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়া ও বেকারত্ব বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। “আমরা মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছি না। তবে যদি এ শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরো বাড়ানো হয়, তাহলে আপনি অবশ্যই দুর্বল প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও শ্রমবাজারে বড় বা ছোট আঘাত দেখতে পাবেন।’
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও কর্মী ছাঁটাই বাড়ছে। যার মধ্যে রয়েছে বৃহৎ পরিসরে ফেডারেল ছাঁটাই, তহবিল কর্তন, গণহারে বহিষ্কার ও শুল্ক। এর মধ্যেই মার্চের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয় যে গত মাসের মতো শ্রমবাজার ভালো অবস্থায় ছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক ঘোষণা এবং এর ফলে বিশ্ববাজারের পতনের কথা বিবেচনা করে এটি নতুনত্ব হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন” ন্যাশনওয়াইডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্যাথি বোস্টজানসিক। আর কর্মসংস্থান সংস্থা ম্যানপাওয়ার গ্রুপের মার্কিন কান্ট্রি ম্যানেজার গের ডয়েল বলেছেন, ‘যদিও মার্কিন শ্রমবাজার স্থিতিশীল প্রমাণিত হচ্ছে, তবু এটি শীতল হওয়ার লক্ষণ রয়েছে, যা নিয়োগকর্তাদের অনিশ্চয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভোক্তা ব্যয়ের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমবাজার, যা সব অর্থনৈতিক কার্যকলাপের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। তবে গত বছর ধরে চাকরির বৃদ্ধি ধীর হয়ে গেছে। যদিও শুল্ক ও অভিবাসনসম্পর্কিত কার্যকলাপের প্রভাবের তথ্য সামনে আসতে সময় লাগবে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ফেডারেল কর্মী হ্রাস। বিএলএসের তথ্যানুসারে, খাতটি টানা দুই মাস ধরে চাকরি হারানোর খবর দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজার ও মার্চে চার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে। সরকারি দক্ষতা বিভাগ থেকেও তিন লাখ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সব ফেডারেল কর্মীকে তাৎক্ষণিকভাবে ছাঁটাই করা হয়নি, তাই শ্রমবাজার ও বেকারত্বের ওপর এর প্রভাব ধীরগতিতে পড়বে।
তবে বলা হচ্ছে, যখন এ চাকরি হারায় বা ঠিকাদারদের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং বিশেষ করে তহবিল কাটা হয়, তখন এর বহুগুণ প্রভাব পড়ে। এ কঠোর নীতিগত পরিবর্তনগুলো বেসরকারি খাতকে কীভাবে নাড়া দিচ্ছে তা বোঝার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের মতো খাতগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন