আরবদের গাজা পুনর্গঠনের ‘বাস্তবসম্মত’ পরিকল্পনায় সমর্থন জানালেন ইউরোপীয় নেতারা – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৫:০৪ অপরাহ্ন

আরবদের গাজা পুনর্গঠনের ‘বাস্তবসম্মত’ পরিকল্পনায় সমর্থন জানালেন ইউরোপীয় নেতারা

  • ০৯/০৩/২০২৫

প্রধান ইউরোপীয় দেশগুলো গাজার পুনর্গঠনের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর একটি পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার। গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত না করেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
মিসরের প্রস্তাবিত ও আরব নেতাদের সমর্থন পাওয়া এই পরিকল্পনা অবশ্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় করছেন।
শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিসরের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। এ প্রস্তাবে গাজাকে পাঁচ বছরে পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে।
এক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, এই প্রস্তাব গাজার মানুষের ‘দুর্বিষহ জীবনযাত্রার দ্রুত এবং টেকসই উন্নতি’ নিশ্চিত করতে পারে।
এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব সাময়িকভাবে স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির হাতে থাকবে। পাশাপাশি সেখানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হবে।
এই কমিটি গাজায় মানবিক সহায়তা পরিচালনা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সাময়িক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে।
এ প্রস্তাব এমন এক সময় এসেছে, যখন গাজার নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছয় সপ্তাহের প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ১ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
ইসরায়েল গাজায় সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেয়। এই প্রস্তাবে এই প্রস্তাবে গাজায় আটক আরও কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে।
তবে হামাসের বলেছে, তারা আগের চুক্তি অনুযায়ীই যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন চায়—যার অধীনে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, সোমবার কাতারে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে।
তবে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হবে কি না বা কবে বাস্তবায়ন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। অবশ্য হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানুয়া বলেছেন, আসন্ন আলোচনার জন্য কিছু ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ পাওয়া যাচ্ছে।
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আরব-সমর্থিত এই পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে সামনে এসেছে। ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অঞ্চলটির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করবে।
মিসর মঙ্গলবার আরব লীগের জরুরি সম্মেলনে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। সেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাসের পরিকল্পনায় সমর্থন দেয়।
তবে হোয়াইট হাউস ও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই পরিকল্পনা গাজার বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করতে পারেনি।
মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, ‘মানুষ ধ্বংসস্তূপ আর অবিস্ফোরিত গোলার মধ্যে মানবিকভাবে বসবাস করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজাকে হামাসমুক্ত করে পুনর্গঠনের পরিকল্পনায় অটল রয়েছেন।’
এদিকে শনিবার ইউরোপের চার দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারা ‘আরব উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগকে তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’ হিসেবে দেখছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামাস যেন ‘আর গাজার শাসন করতে না পারে এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে’, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দেশ চারটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং তাদের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গাজার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় সবাই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালায়, যার ফলে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং গাজার অবকাঠামোর বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us