কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চীন। ভোক্তা ব্যয় ও রিয়েল এস্টেট খাতের পতনে চাপে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি। সর্বশেষ প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তারা। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দুদিনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সভা শেষ করেছেন চীনা নেতারা। সেখান থেকে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরো সক্রিয় পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি এসেছে। যদিও নতুন প্রণোদনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। চীনে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারণী ফোরাম পলিট ব্যুরো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে যেসব কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছিল, সর্বশেষ বৈঠকেও তা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ওই বৈঠকে নেতারা মুদ্রানীতি শিথিল ও আরো সক্রিয় অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহায়তার জন্য সরকার আরো প্রণোদনা দেবে, সম্প্রতি এমন প্রত্যাশায় বাজারে খানিকটা গতি ফিরেছে। তবে ভোক্তা ব্যয় কমায় দেশটির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। ২০০৭ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে চীন বিগত দশক ধরে ‘সতর্ক’ দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়ন ও অনুসরণ করে আসছিল। এখন নীতিনির্ধারণী পর্যায়গুলোয় ‘মোটামুটি শিথিল’ দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছে। এ হিসেবে দেশটির অর্থনৈতিক কৌশলে কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে।
মহামারী-পরবর্তী স্থবিরতা কাটাতে চলতি বছর অনেক প্রণোদনা উদ্যোগ নিয়েছে চীন। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কোনোটিই তত নাটকীয় ছিল না। সিসিটিভি জানিয়েছে, চীন বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বাড়াবে এবং অতিরিক্ত ব্যয় সংকুলানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে ‘অতি-দীর্ঘমেয়াদি’ বন্ড ইস্যু অব্যাহত রাখবে। তবে মোট কত ব্যয় বা ঘাটতির আকার কতটা হবে, সে সম্পর্কে বিশদ কোনো তথ্য দেয়নি।
এছাড়া সম্পত্তি খাতে স্থিতিশীলতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেতারা। কয়েক বছর আগে প্রপার্টি ডেভেলপারদের অতিরিক্ত ঋণ নেয়া ঠেকাতে দমন অভিযান শুরু করেছিল চীন। এরপর খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ খাতটি। বৈঠকে ভোক্তা ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টিও উঠে আসে। সূত্র বলছে, চাকরির বাজারের দুর্বলতা মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধির সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভোক্তা ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য উন্নত প্রযুক্তি বিকাশ ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন। তার নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করছে। কয়েক মাস আগে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওবি) এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন খাতে নীতি প্রণয়ন শুরু করেছিল, যা পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যয় বাড়াতে উৎসাহিত করে। পলিটব্যুরো সভার পর প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব প্রতিশ্রুতিগুলোর কথা আবারো উঠে এসেছে। এদিকে গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে চাঙ্গা করতে বেইজিং পুরনো গাড়ি ও যন্ত্রপাতি বদলে নতুন এবং আরো জ্বালানিসাশ্রয়ী সরঞ্জাম কেনার জন্য ভর্তুকি কর্মসূচি চালু করেছে। চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্সের মতে, এ প্রকল্প গাড়ি বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করেছে, যা অর্থনীতিটির প্রবৃদ্ধিতে থাকা অন্যতম খাত। শিল্প সংগঠনটি জানিয়েছে, যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি নভেম্বরে আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যা অক্টোবরের পর টানা দ্বিতীয় মাসে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি। অক্টোবরে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
পলিট ব্যুরোর সভা থেকে ইতিবাচক নীতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আমরা অটোমোবাইল খাতে ক্রেতা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য প্রাসঙ্গিক নীতিগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানাই।
সাম্প্রতিক সময়ে চীনের রফতানি বাড়ারও শক্তিশালী লক্ষণ দেখা গেছে। যদিও বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনসহ অন্যান্য চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর কারণে বাণিজ্যনির্ভর প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে সম্পত্তি খাতেও দীর্ঘ মন্দা থেকে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হতে সময় লাগবে। (খবরঃ এপি)।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন