ইলেকট্রিক গাড়ি, মহাকাশ অভিযান ও প্রযুক্তির মতো খাতে ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থে আমেরিকার দেশি ও বিদেশ নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছায়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে মাস্ককে।
ধারনা করা হচ্ছে, নতুন প্রশাসনে ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে নাসাকে পাশ কাটিয়ে স্পেসএক্সকে সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ ইলন মাস্কের অনেক প্রজেক্ট সরকারি তহবিল দ্বারা পরিচালিত হয়। তাছাড়া ভবিষ্যতে আমেরিকার রাজনীতিতে ধনীদের প্রভার আরও বাড়বে।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্কা জাকারবার্গের সঙ্গেও ট্রাম্পের সাম্প্র্রতিক বৈঠক সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আসছে প্রশাসনকে পরামর্শ দেবেন মেটার নির্বাহী। এর বাইরে আরেক শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনে অবিস্মরণীয় জয় পাওয়ার পর ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে একজন মহাতারকার জš§ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ি ইলন মাস্ককে লক্ষ্য করেই এমন প্রশংসা ঝরেছে প্রেসিডেন্ট ইলেক্টের কণ্ঠে। কারণ নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে ট্রাম্পের পক্ষে দেদার অর্থ খরচ করেছেন বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী।
টেসলা, স্পেসএক্সয়ের কর্ণধার নিজের এক্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার এবং মিলিয়ন ডলার লটারির মতো বিতর্কিত প্রচারণায় রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে সশরীরে যোগ দেন। সব মিলিয়ে নিজেকে কট্টরপন্থি একজন রক্ষণশীল হিসেবে জাহির করেন। তাইতো নির্বাচনে জয়ের রাতে মার-আ-লাগোয় নিজের পরিবারের সঙ্গে ইলনকেও শামিল করেন ট্রাম্প।
প্রচারণা চালাতে গিয়ে ট্রাম্পকে সত্যিকার পুরুষ এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বকে অন্যের হাতের পুতুল বলে কটাক্ষ করেন মাস্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর গত ৬ নভেম্বর এক্সবার্তায় মাস্ক চমৎকার এক ভবিষ্যৎ সামনে অপেক্ষা করছে বলে বার্তা দেন।
ট্রাম্পের ঘরানায় ইলনকে কো-প্রেসিডেন্ট বা ছায়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আগামী প্রশাসনে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফেসিয়েন্সির দায়িত্ব নিয়ে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনবেন মাস্ক এবং সেটি করা হবে তার ব্যবসায়িক স্বার্থেই। নাসা ও ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের অন্যতম বড় ঠিকাদার স্পেসএক্স। প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলেকট্রিক গাড়ি, মহাকাশ অভিযান ও প্রযুক্তির মতো খাতে ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থে আমেরিকার দেশি ও বিদেশ নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান আশা করছেন ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবেন না ইলন। কিন্তু এতে আশ্বস্ত হচ্ছেন না প্রযুক্তিবিষয়ক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ইলনের অতীত ইতিহাস বলে তিনি নিয়মিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। যেকোনো কিছুর চেয়ে নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
স্টার লিংক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক যা স্বল্প খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে যুদ্ধ করছে ইউক্রেনের সেনারা। তাইতো দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেকির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইলন। অর্থাৎ ইলন মাস্ক যদি ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান তাতেও খুব একটা আশ্বর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশ্লেষকরা আগেই বলেছিলেন, মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার সুদূরপ্রসারী কৌশলেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
খবর: এবিসি নিউজ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন