অ্যাঙ্গোলাসহ আফ্রিকার দেশগুলোয় বড় ধরণের বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডাতে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাইডেন এই আশ্বাস দেন। অ্যাঙ্গোলা সফর করা প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হলেন বাইডেন।
অ্যাঙ্গোলার ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব স্লেভারিতেতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাঙ্গোলা সফর তার জন্য গর্বের।
এ সময় দাসপ্রথাকে ইতিহাসের বর্বরোচিত অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাসের দায় থেকে কেউ মুক্ত নন।তিনি বলেন, এরই মধ্যে তার প্রশাসন অ্যাঙ্গোলার বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আফ্রিকার দেশগুলোর উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অবদান রাখতে আমেরিকা বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, আফ্রিকার উন্নয়নের ওপর বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন ভালো অবস্থায় আছে জানিয়ে বাইডেন বলেন, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তার প্রশাসন আফ্রিকার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে।
এ সময় দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বাণিজ্যক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখায় অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, তার প্রশাসন অ্যাঙ্গোলার শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়ে দুইদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী। বাইডেন অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট জাঁও লোরেন্সোকে বলেন, প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাঙ্গোলা সফরে আসতে পেরে আমি গর্বিত এবং আরও বেশি গর্বিত যে আমরা একই সঙ্গে আমাদের সহযোগিতাকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে পেরেছি। আরও অনেক কিছু আমাদের সামনে রয়েছে, আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। জলবায়ুগত কারণে আফ্রিকার বাস্তুচ্যুত মানুষদের সাহায্যে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের অনুদান ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, পরিবেশগত বিপর্যয় রুখতে আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে আমেরিকা। এছাড়া সামনের দিনগুলোয় অনুদান এবং বিনিয়োগের হার উল্লেখযোগ্য আকারে বাড়ানো হবে বলেও আশ্বাস দেন বাইডেন। এটি হল ২০১৫ সালের পর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রথম সফর। তার এই সফরের কারণে অ্যাঙ্গোলা সরকার ৩ ও ৪ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
২০২২ সালে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা শীর্ষ-সম্মেলনে মার্কিন সরকার আফ্রিকায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়, বাইডেনের নিজেরও ২০২৩ সালে আফ্রিকা সফর করার কথা ছিল। তবে বাইডেন পূর্বসূচি অনুসারে আফ্রিকায় সফর করেননি। হারিকেন বিপর্যয়ের কারণে গত অক্টোবরে তার অ্যাঙ্গোলা সফর স্থগিত করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল ও আন্তর্জাতিক ইস্যু গবেষণা কেন্দ্রের আফ্রিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্যামেরন হাডসন বলেন, যদিও বাইডেন মন্ত্রিসভার অনেক কর্মকর্তা আফ্রিকা সফর করেছেন, তবে তা প্রেসিডেন্টের সফরের অভাব পূরণ করতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে আফ্রিকাকে উপেক্ষা করেছে, ওই অঞ্চলের প্রতি তারা প্রতিশ্রুতি পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের আফ্রিকা বিষয়ক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ফ্রান্সেস ব্রাউন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে পূর্বাঞ্চলে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে শান্তি ও নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলা। আরেকটি হচ্ছে ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি করা। তৃতীয়টি হচ্ছে প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা।
উল্লেখ্য, তেল-সমৃদ্ধ দেশ অ্যাঙ্গোলা। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। রাশিয়ারও বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। তাই জব আই টেনের এই সফরে বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যৌথভাবে ৮০০ মাইল রেল প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। যার লক্ষ্য, রপ্তানির জন্য আফ্রিকা থেকে অ্যাঙ্গোলার পশ্চিম বন্দরে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পরিবহনের সুবিধা দেয়া। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে আফ্রিকা মহাদেশে চীনের প্রভাব বেড়েছে। বেইজিং তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে গত এক দশকে মহাদেশজুড়ে অবকাঠামো প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং মহাদেশের জন্য ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
–
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন