জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যথেষ্ট কাজ করছে না বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত বৃহত্তম খাদ্য ও পানীয় জায়ান্টগুলো। এমন অভিযোগ তুলে যুক্তরাজ্যের অ্যাক্টিভিস্টদের একটি অংশ বলছে, এসব কোম্পানি যে হারে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করছে তা বিস্ময়কর।
সাম্প্রতিক এ প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যে শীর্ষ অবস্থানে থাকা খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী ১০ কোম্পানি অনেক বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে। তাদের নিঃসৃত ক্ষতিকারক গ্যাসের পরিমাণ এভিয়েশন খাতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
২০২২ সালে কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করেছে তা ৪৭ কোটি ৭০ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য। অন্যদিকে বৈশ্বিক এভিয়েশন খাতে নিঃসরণের পরিমাণ ৪২ কোটি ৬০ লাখ টন। একই বছর যুক্তরাজ্যের সামগ্রিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ছিল ওই ১০ কোম্পানির তুলনায় কম, ৪২ কোটি ৬০ লাখ টন।
অভিযোগে বলা হচ্ছে, এসব কোম্পানির অনেকই প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েও পালন করছে না। বরং পরিবেশের বড় ক্ষতি করে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফুড ক্যাম্পেইন বাইট ব্যাকের প্রধান নির্বাহী জেমস টুপ বলেন, ‘গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিসংখ্যান সত্যিই উদ্বেগজনক। এর থেকে প্রমাণ হয় ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের নিট জিরো নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এসব বৈশ্বিক খাদ্য ও পানীয় উৎপাদক নিজেদের দায়িত্ব থেকে সরে আসছে।’
বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৩০ শতাংশ করে খাদ্য শিল্প। এ শিল্পে গ্রিনহাউজ গ্যাস বিভিন্নভাবে নিঃসরণ হয়। ফসল রোপণে বনভূমি পরিষ্কার করায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। গবাদি পশু ও ধানখেত থেকে মিথেন নিঃসরণ হয়। ফলন বাড়াতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হয়, যা আরেকটি শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস। মোড়কজাতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে আরেক দফা বাড়ে ক্ষতিকারণ এ গ্যাস।
জেমস টুপ বলেন, ‘এই যে খাদ্য কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করছে, জরুরি ভিত্তিতে তাদের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর ধীরগতি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের অবশ্যই মানুষ ও গ্রহের স্বাস্থ্যের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং অবিলম্বে পরিবেশগত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।’
এ বৃহত্তম খাদ্য ও পানীয় ১০টি কোম্পানি হলো কোকা-কোলা, ড্যানোন, ফেরেরো, কেলগ’স, ক্রাফট হেইঞ্জ, মার্স, মন্ডেলেজ, নেসলে, পেপসিকো ও ইউনিলিভার। কোম্পানিগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে দুটি স্বাধীন পরিবেশ সংস্থার সঙ্গে পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাইট ব্যাক। সংস্থার বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২২ সালে ফেরেরো, ক্রাফট হেইঞ্জ ও পেপসিকোর বার্ষিক নিঃসরণ বেড়েছে। বাকি সাতটি কোম্পানিও ২০৫০ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে পিছিয়ে আছে। নিট জিরো নিঃসরণের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ড্যানোন, মার্স, মন্ডেলেজ ও নেসলে।
বিশ্লেষণের তথ্যমতে, ২০২২ সালে নেসলে সবচেয়ে বেশি ১১ কোটি ৩০ লাখ টন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করেছে। ইউনিলিভার, পেপসিকো ও কোকা-কোলার নিঃসরণের পরিমাণ যথাক্রমে ১১ কোটি ১১ লাখ, ৬ কোটি ১৪ লাখ ও ৬ কোটি ১৩ লাখ টন।
যুক্তরাজ্যের ফুড অ্যান্ড ড্রিংক ফেডারেশনের এক মুখপাত্র জানান, প্রতিবেদনে যা দাবি করা হচ্ছে, তাতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। কোম্পানিগুলোর বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের কথা উল্লেখ করা হলেও যুক্তরাজ্যে তাদের নিঃসরণ সম্পর্কে বলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের কার্বন নিঃসরণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে আমরা যে খাবার খাই তা থেকে। এক্ষেত্রে উৎপাদকদের অংশ মাত্র ৬ শতাংশ।’
খবর দ্য গার্ডিয়ান।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন