MENU
 মরক্কো থেকে ৪০০০ কিলোমিটার সাগরতল হয়ে বিদ্যুৎ যাবে যুক্তরাজ্যে – The Finance BD
 ঢাকা     সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১১ অপরাহ্ন

মরক্কো থেকে ৪০০০ কিলোমিটার সাগরতল হয়ে বিদ্যুৎ যাবে যুক্তরাজ্যে

  • ০৪/১২/২০২৪

বৃহত্তর লন্ডনের সমান এলাকাজুড়ে মরক্কোর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে স্থাপিত হয়েছে বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ ফার্ম। কয়েক বছরের মধ্যে এখান থেকে ৯০ লাখের বেশি ব্রিটিশ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মূলত সাগরতলে স্থাপিত তার বা সাবসি পাওয়ার কেবলের মাধ্যমে উৎপাদন স্থলের চার হাজার কিলোমিটার দূরে সরবরাহ করা হবে এ বিদ্যুৎ।
উদ্যোগটি নিয়েছেন ব্রিটিশ খুচরা পণ্য বিক্রেতা চেইন টেসকোর সাবেক প্রধান স্যার ডেভ লুইস। তার লক্ষ্য হলো উত্তর আফ্রিকার নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ গ্রেট ব্রিটেনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি কর্মসূচিতে কাজে লাগানো।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রের তলদেশে চার হাজার কিলোমিটার কেবলের মাধ্যমে মরক্কোর ট্যানটান প্রদেশ থেকে ডেভনের উপকূলে বিদ্যুৎ যাবে। এ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ও ব্যাটারি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রেট ব্রিটেনের চাহিদার প্রায় ৮ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব।
প্রতিবেদন অনুসারে, মরক্কোর অবারিত সূর্যালোক ও নিরবচ্ছিন্ন বাতাসের গতি প্রকল্পটিকে টেকসই করে তুলেছে। এখান থেকে সারা বছরে প্রতিদিন প্রায় ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। আর উৎস থেকে সরবরাহ পূর্বাভাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য।
পরিকল্পনাটিকে ‘সাহসী উদ্যোগ’ উল্লেখ করে ডেভ লুইস বলেন, ‘প্রথমে যখন লোকেরা জানতে পারে আমরা কী করছি, তখন তারা মনে করেছিল আমরা পাগল। পরে ব্যাখ্যা শুনে আমাদের সমর্থন জানায়।’
ডেভ লুইস ২০২০ সালে এক্সলিংকস নামের কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। এর আগে পাঁচ বছরের একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় রিটেইল কোম্পানি টেসকোকে পতনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। এরপর টেসকোকে বিদায় জানিয়েছে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখার সুযোগ খুঁজছিলেন তিনি।
ডেভ লুইস বলেন, ‘টেসকোয় থাকাটা সহজ হতো, কারণ কঠিন কাজগুলো এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং মনে করি আমাদের এ বিষয়ে কিছু করতে হবে।’
গত চার বছরে ছয়জন জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার পরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকার থেকে সবুজসংকেত পাননি ডেভ লুইস। বলা হচ্ছে, প্রকল্পটি সরকারি বিনিয়োগ ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারবে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহে একটি স্থিতিশীল মূল্য নিশ্চিত করবে প্রকল্পটি এমন চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। লুইস প্রতি মেগাওয়াট ঘণ্টায় (এমডব্লিউএইচ) ৭০-৮০ পাউন্ড হিসেবে মূল্যনির্ধারণ করেছেন, যা হিঙ্কলি পয়েন্ট সি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি মূল্যের চেয়ে কম এবং ভবিষ্যতের অফশোর উইন্ড ফার্মের প্রত্যাশিত খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রকল্পটি বিকাশে ১০ কোটি পাউন্ডের তহবিলের জন্য এরই মধ্যে এনার্জি খাতের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে একটি দল গড়ে তুলেছেন ডেভ লুইস। যেখানে রয়েছে ফ্রান্সের টোটালএনার্জিস, আবুধাবি ন্যাশনাল এনার্জি কোম্পানি (টিএকিউএ), জেনারেল ইলেকট্রিকের বিনিয়োগ শাখা, ব্রিটেনের অক্টোপাস এনার্জি ও এর প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ জ্যাকসন।
এ বিষয়ে গ্রেগ জ্যাকসন বলেন, ‘আমার একমাত্র আক্ষেপ হলো প্রকল্পটি আমার মাথায় আসেনি। যদি জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো বিষাক্ত এবং লিকপ্রবণ পদার্থ স্থানান্তরের জন্য পাইপলাইন তৈরি করতে পারে, তবে আমরা অবশ্যই সহজে পাওয়ার লাইন স্থাপন করতে পারি। এক্সলিংকসের পরিকল্পনা সম্পর্কে শুনে সমর্থন করতে আগ্রহী হয়েছিলাম।’
প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য মনে হলেও বিদেশ নির্ভরতা নিয়ে অনেকের মাঝে উদ্বেগ থাকতে পারে। বিষয়টি আমলে নিয়ে ডেভ লুইস নিজেকে ‘বাস্তববাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি দ্বীপ। যুক্তরাজ্যের পক্ষে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা রক্ষা করার প্রয়োজন। তবে যদি পরিষেবাগুলো যথেষ্ট বড় হয়, কেন আমরা তা গ্রহণ করব না?’
ডেভ লুইসের পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে পারে, যা দশকের শেষ নাগাদ একটি পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা তৈরিতে সরকারি লক্ষ্য এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সাহায্য করবে। এ লক্ষ্য অনুসারে, যুক্তরাজ্যে ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ১৯৯০ সালের তুলানায় ৮১ শতাংশ কমবে।
খবর দ্য গার্ডিয়ান।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us