যুক্তরাষ্ট্রে ছিঁচকে চুরির সঙ্গে জড়িত দলগুলো সম্প্রতি নজর দিয়েছে পণ্যের সরবরাহ চেইন বা ব্যবস্থার গুদাম, পণ্য বহনকারী ট্রাক ও ট্রেনের ওপর। সাধারণ বিক্রেতা সেজে দোকানের পণ্য ওঠানামার কাজ করে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসের একটি চোর চক্র। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, আদতে সাধারণ ব্যক্তি সেজে কাজ করা ওই ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ চোর দলের সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, ডালাসের ওই পণ্যের গুদামে ছিদ্র করে প্রায় ৫ লাখ ডলার সমমূল্যের ইলেক্ট্রনিকস পণ্য লুট করেছে চোর চক্রটি।
ডালাসের গুদামে চুরির সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ডালাসের বিভিন্ন জায়গায় চুরি হওয়া প্রায় কয়েক মিলিয়ন ডলার মুল্যের পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িত এই সাতজন। এসব অপরাধের জন্য তারা পণ্য খালাসের ব্যস্ততম দিন হিসেবে সোমবারকে বেছে নেয় বলে মনে করেন এটিএফ স্পেশাল এজেন্ট ইন চার্জ জিম ক্যাভানাহ। গত মাসে নর্থ ক্যারোলিনায় প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজে দুই চোরকে হামাগুড়ি দিয়ে একটি কম্পিউটার পণ্যের গুদামে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে শিকাগোয় একটি ক্যামেরায় ধরা পরে একদল অপরাধীর একটি মালবাহী ট্রেইন লুটের ঘটনা।
কার্গোনেটের তথ্যমতে, বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে আমেরিকা ও কানাডায় কার্গো চুরির হার বেড়েছে ১৪ শতাংশ। যার অর্থমূল্য ৩৯ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি। চুরি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল ও ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী। এসব পণ্যের বেশির ভাগ চুরি করা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় এবং টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন গুদাম থেকে। চুরির জন্য প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন নতুন পদ্ধতি বেছে নিচ্ছে চোরচক্র। সরবারহ চেইনগুলোর ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভুয়া চালান বানিয়ে পণ্য লুট করছে তারা, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।
ইউএস অ্যান্ড কানাডা কার্গো থেফট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে উত্তর আমেরিকায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গুদাম ও কার্গোয় চুরি বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতি চুরির ঘটনায় বার্ষিক ভিত্তিতে গড়ে ক্ষতি বেড়েছে ৮৩ শতাংশ বা ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩০ ডলার।
সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। এই অঙ্গরাজ্যে চলতি মৌসুমে ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ চুরি বেড়েছে। এর পরের অবস্থান টেক্সাসের–১৪ শতাংশ। কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই এলাকার প্রথম ২০০ মাইলের মধ্যে যত শিপমেন্ট হয়, তার মধ্যে চুরির হার ৩৬ শতাংশ। প্রতি মাসে এখানে ৫৮ দশমিক ৬টি চুরির ঘটনা ঘটে। এ হিসেবে রেজ জােনে চুরির ঘটনা সম্মিলিতভাবে টেক্সাস, টেনেসি, ইলনয়, জর্জিয়া ও আরিজোনার সমান।
এই প্রতিবেদনকে অ্যালার্মিং মনে করছেন ওভারহাউলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ব্যারি কনলন। তিন বলেন, আমরা মনে কির এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে চুরে ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এত বেশি চুরি হচ্ছে যে কোম্পানিগুলো সরবরাহ ব্যবস্থায় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে। তার মতে, অপরাধীরা শুধু সংঘবদ্ধই নয়, তারা পণ্যের ওঠানামা, গুদাম থেকে আনা–নেয়া, বিতরণ সব নজরে রাখছে। তারা জানে কোথায় মূল্যবান পণ্য স্টোর করা হচ্ছে। এরপর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
কার্গো থেফট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী চুরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি–মোট চুরির ২৩ শতাংশ। এরপর রয়েছে গৃহস্থালী ও বাগান পরিচর্যা সামগ্রী। একই সময়ে ছিঁচকে চুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে; কার্গো ও গুদাম থেকে এ ধরণের চুরি গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
খবর: এবিসি নিউজ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন