জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় ২০৩৫ সালের মধ্যে পেট্রলচালিত দহন ইঞ্জিন গাড়ি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে অটোমোবাইল খাতের ওপর চাপ কমাতে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে অঞ্চলটির বৃহত্তম রাজনৈতিক গোষ্ঠী কনজারভেটিভ ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি)। ইপিপি বলছে, আসন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের গাড়ি নির্মাণ শিল্পের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। তাই বায়োফুয়েলসহ স্বল্প মাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানি ব্যবহার সাপেক্ষে এ ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া উচিত।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণের নতুন সীমা অতিক্রম করায় গাড়ি নির্মাতাদের ওপর আরোপিত জরিমানাও পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’ বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জরিমানার প্রবর্তন করা হয়েছিল। তবে ইউরোপে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ায় এখন এ পদক্ষেপ উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়েছে বলে ইপিপি জানিয়েছে।
২০৩৫ সালের মধ্যে পেট্রলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধের আইনটি ২০২৬ সাল নাগাদ পর্যালোচনা হওয়ার কথা। তবে এটি এক বছর এগিয়ে ২০২৫ সালে আনার দাবি জানিয়েছে ইপিপি। এ বিষয়ে গোষ্ঠীটির অবস্থান তুলে ধরে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ পর্যালোচনা নিষেধাজ্ঞা সংশোধন এবং শিল্প খাতকে আইনি সুরক্ষা ও পরিকল্পনার সুযোগ দিতে সহায়ক হবে।
উরসুলা ভন ডার লেয়েনের প্রথম মেয়াদে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য ইইউর নিট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এ নিয়ে শিল্প খাতে সংশয় বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে চলতি সপ্তাহে ইসি প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, গভীর ও ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন রোধে যৌথভাবে সমাধান তৈরি করতে তিনি নিজেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ইপিপি নেতা ও জার্মান রাজনীতিক ম্যানফ্রেড ওয়েবার চলতি মাসে অটোমোবাইল খাতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ফক্সওয়াগন ও ফোর্ডের মতো কোম্পানি কয়েক হাজার চাকরি ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়ার পর এ শিল্পের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
রেনো ছাড়া ইউরোপের প্রধান অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো মুনাফা কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা চীনের সাশ্রয়ী দামের ইভির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খাচ্ছে। তাছাড়া ইউরোপের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ইভি উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় অটোমোবাইল শিল্প সংস্থা (এসিয়া) ২০২৫ সালে কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর হওয়ার আগে”জরুরি সহায়তা কার্যক্রম চালুর দাবি করেছে।
জুনে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর ওয়েবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন। ২০৩৫ সালের আসন্ন নিষেধাজ্ঞাকে ‘আত্মঘাতী নীতি’”বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজও নিঃসরণের সীমা অতিক্রমের কারণে আরোপিত জরিমানা বাতিলের দাবি জানান।
ইতালি ও চেক রিপাবলিকের নেতৃত্বে সাত ইউরোপীয় দেশের শিল্পমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার ইপিপির অবস্থানসূচক বিবৃতির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। তারা ২০৩৫ সালের নিষেধাজ্ঞার আগে পর্যালোচনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে আরো বেশি সুযোগ প্রদানের আহ্বান জানান। ভোক্তাদের ইভি কিনতে উৎসাহিত করতে আরো প্রণোদনার কথাও বলেন শিল্পমন্ত্রীরা।
খবর রয়টার্স।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন