‘বৈদেশিক খেলাপির’ তকমা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের ঋণ বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলংকা সরকার। ‘বৈদেশিক খেলাপির’ তকমা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের ঋণ বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে শ্রীলংকা সরকার। এ চুক্তি চূড়ান্ত হলে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি ডলারের বন্ড ছাড়া হবে। বন্ডের ডলার দিয়ে বৈদেশিক ঋণখেলাপি থেকে মুক্তি পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্রটি।
শ্রীলংকা সরকার গত মঙ্গলবার জানায়, বিনিয়োগকারীরা আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। যদিও বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী এরই মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছেন।
২০২২ সালের মে মাসে শ্রীলংকা ডলারে ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেয়। চীনসহ বেশ কয়েকটি ঋণদাতা দেশ ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে একমত হতে না পারায় সমাধান বিলম্ব হয়েছিল। চলতি বছর জাম্বিয়া ও ঘানাও একই পদ্ধতিতে দীর্ঘস্থায়ী ঋণ সংকট সমাধান করেছে। শ্রীলংকার এ চুক্তি বাস্তবায়ন হলে প্রমাণ হবে সার্বভৌম ঋণ পুনর্গঠনের ব্যবস্থা এখনো কার্যকর।
বিনিয়োগকারীদের এ চুক্তি ম্যাক্রো-লিংকড বন্ড ও গভর্ন্যান্স-লিংকড বন্ডের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলবে। ম্যাক্রো-লিংকড বন্ডে জিডিপির সঙ্গে পেমেন্টকে যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে গভর্ন্যান্স-লিংকড বন্ড কর ও অন্যান্য সংস্কারের বিনিময়ে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
গত সেপ্টেম্বর ঋণ পুনর্গঠনের প্রস্তাবকে শ্রীলংকার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট অনুরা দিসানায়কে।
পুনর্গঠনের চুক্তি কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলংকার ডিফল্ট বন্ডের দাম এ বছর এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে আইএমএফ শ্রীলংকাকে ৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে আরো ৩৩ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এতে শর্ত হচ্ছে, শ্রীলংকাকে তার ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে।
আমুন্ডি, ব্ল্যাকরক ও জিএমওসহ বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে গঠিত ঋণদাতা কমিটি বলেছে, নতুন ঋণ অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার সঙ্গে পেমেন্টকে যুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদে শ্রীলংকার বৈদেশিক ঋণের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করতে অবদান রাখবে। ১০ শতাংশের বেশি ঋণের মালিক স্থানীয় হোল্ডাররাও এ চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
ম্যাক্রো-লিংকড শর্তের কারণে চুক্তিতে পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমাণ কমে দাঁড়াবে ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া শ্রীলংকার জিডিপি যদি পরবর্তী কয়েক বছর নামমাত্র শর্তে গড়ে ৯০ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকে, তবে মূল ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ডের চেয়ে কম কুপন দেয়া হবে। গড় জিডিপি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে গেলে ঋণ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে এবং সে অনুযায়ী কুপন দেয়া হবে। গড় জিডিপি ৮৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেলে বন্ড ৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে। ইউক্রেন ও জাম্বিয়ার সাম্প্রতিক ঋণ পুনর্গঠনও বন্ড পরিশোধকে জিডিপির সঙ্গে যুক্ত করেছে।
শ্রীলংকার অর্থনীতি এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর দেশটি ১৯৭৭ সালের পর প্রথমবারের মতো চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত রেকর্ড করেছে। শ্রীলংকার অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, নতুন বন্ডের বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে হোল্ডারদের সঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনা করা হয়েছে, যেন সব পক্ষই এর মাধ্যমে লাভবান হয়।
খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন