ইউনিক্লো নামটি এসেছে ‘ইউনিক’ ও ‘ক্লথিং’ শব্দ দুটির সমন্বয়ে। লাইফওয়্যার বা দৈনন্দিন ব্যবহারের পোশাককে মূল ধারণা হিসেবে নিয়ে গড়ে উঠেছে এ ব্র্যান্ড। বিশ্বব্যাপী আড়াই হাজারের বেশি শাখা রয়েছে জাপানি খুচরা পোশাক বিক্রেতা ইউনিক্লোর। প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর সম্প্রতি ফাস্ট রিটেইলিং কোম্পানির মালিকানাধীন ইউনিক্লোর বার্ষিক আয় প্রথমবারের মতো ৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন অতিক্রম করেছে। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, ফাস্ট রিটেইলিংয়ের প্রধান নির্বাহী তাদাশি ইয়ানাই জাপানের শীর্ষ ধনী। তার সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সম্প্রতি টোকিওর সদর দপ্তরে তিনি বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে সাক্ষাৎকার দেন
গত ৪০ বছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?
আসলে ৪০ বছর এত দ্রুত কেটে গেছে যে মনে হয় যেন মাত্র তিন বছর। জাপানে বলা হয় সময় তীরের মতো উড়ে যায়। আমি মূলত একটি আঞ্চলিক ব্যবসা শুরু করেছিলাম। তারপর তা সারা দেশে বিস্তৃত হয়।
আমরা যখন জাপানের ক্যাজুয়াল পোশাকের মধ্যে ২-৩ নম্বরে পৌঁছলাম এবং ১ নম্বরে যাওয়া ছিল হাতের নাগালে তখন ১৯৯৪ সালে আমরা তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পরিণত হলাম। ওই সময় আমাদের মুনাফা এত বেশি হলো যে, এক বছরে আয় দ্বিগুণ হয়ে ৪০০ বিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছয়।
আমাদের আয় ৩০০ বিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছানোর পর বিশ্বব্যাপী ব্যবসা প্রসার করার কথা ভাবি। সে অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ৫০টি শাখা খুলি। আশা করেছিলাম, সেখানেও আমরা জাপানের মতো সফল হব। কিন্তু তা হয়নি। দেড় বছরে আমরা ২১টি আউটলেট খুলি। কিন্তু এর মধ্য়ে শুধু পাঁচটি রেখে ১৬টিই বন্ধ করতে হয়। আশানুরূপ সফল হইনি। এটা সহজ কাজ নয়। খুব কঠিন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের বিক্রি লন্ডনে সবচেয়ে বেশি এবং প্যারিসেও। আমরা ধীরে ধীরে অগ্রগতি করেছি।
এত বছর টিকে থাকার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছেন, সেগুলো কী?
আমরা এমন পোশাক তৈরি করি, যা দীর্ঘ সময় টেকসই হয়। শুধু এক মৌসুমের জন্য নয়। আমি আজ যে ক্যাশমেয়ার সোয়েটারটি পরেছি, তার দাম ৯৯ ডলার। কিন্তু দয়া করে এটিকে ‘সস্তা’ বলবেন না। এটিকে ‘যথার্থমূল্য’ বলুন। আমরা যুক্তিসঙ্গত দামে মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রি করি।
আমরা বিভিন্ন টেকসই উদ্যোগ নিয়েছি এবং শুধু সে বিষয়ে বলি, যা আমরা সত্যিই অর্জন করেছি। টেকসই পোশাক তৈরি আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা পুনর্ব্যবহার, প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ, শরণার্থীদের সহায়তাসহ প্রায় সবকিছুই করেছি।
ওয়াল-মার্টে দাম সস্তা হতে পারে, কিন্তু আমাদের পণ্যগুলো নির্ধারিত মূল্যে প্রকৃত মান নিশ্চিত করে। আমরা সর্বোচ্চ যত্ন ও সময় নিই, অনেক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করি। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা এসব কাজে অনেকটাই অমনোযোগী।
ইউনিক্লোর সাফল্যের কারণ কী, কীভাবে এটি বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে পৌঁছেছে?
যখন আমরা বলি ইউনিক্লো ‘সবার জন্য’, কেউ হয়তো ভাবতে পারে এটি ওয়াল-মার্ট বা টার্গেটের মতো সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি পণ্য। কিন্তু আমরা আসলে বোঝাতে চাই যে আমাদের পণ্য উচ্চমানের, যা ধনী থেকে শুরু করে সব মানুষের কাছে আবেদন সৃষ্টি করে। আমাদের পণ্য শুধু সঠিক রুচি ও বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যই নয়, বরং যারা পোশাক সম্পর্কে বেশি জানে না তাদের কাছেও সমাদৃত। আমাদের পোশাকের নকশা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সামঞ্জস্য করা, উপাদান উচ্চমানের। সে সঙ্গে পোশাক টেকসই হবে কিনা, তাও বিবেচনা করা হয়েছে।
আমরা প্রথমে খুচরা বিক্রেতা ছিলাম, তারপর একই সঙ্গে প্রস্তুতকারক ও খুচরা বিক্রেতা। এখন আমরা একটি ডিজিটাল কনজিউমার রিটেইল কোম্পানি। এ কারণেই আমরা সফল। যদি একইভাবে থাকতাম, তবে আমরা সফল হওয়ার আশা করতে পারতাম না।
ডিজিটাল কনজিউমার রিটেইল কোম্পানি হওয়ার অর্থ হলো, কাজের জন্য আমরা উচ্চ স্তরের তথ্য ব্যবহার করি। আমরা আমাদের গ্রাহকদের, দোকানের কর্মীদের, বাজার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করি। প্রতিদিন পরিবর্তন হওয়া আমাদের স্থিতিশীল বৃদ্ধির একমাত্র উপায়। বিশ্ব প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে।
আরো ৪০ বছর এ অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে আপনি আত্মবিশ্বাসী?
অবশ্যই। আমরা এত বছর ধরে ৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন আয়ে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমরা অবশেষে পরিচিত হতে শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে। আমরা মাত্র শুরু করেছি এবং এ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখব। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীন ও ভারতে ব্যবসা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু দুটি দেশের প্রতিটিতে জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। পোশাক একটি প্রয়োজনীয় পণ্য, তাই জনসংখ্যার আকার সেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন