১৪ বছর পর যুক্তরাজ্যের বাজেট ঘোষণা করেছে লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার। এবারের বাজেট ঘোষণার অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি তাদের। চলতি মাসে দেশটির বেসরকারি খাতে টানা ১২ মাসের সম্প্রসারণ থমকে গেছে। কমে গেছে খুচরা বিক্রিও। এর জন্য চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের কর বাড়ানোর নীতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী বলেছেন, নভেম্বরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম গত বছরের একই মাসের পর প্রথমবার কমে গেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে খুচরা বিক্রি কমে গেছে। অথচ ক্রিসমাসকে সামনে রেখে এ সময় খুচরা বিক্রি বাড়ার কথা। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের এক জরিপ অনুসারে, উৎপাদকদের কাছে আসা নতুন কার্যাদেশ ব্যাপক হারে কমে গেছে। সংকোচনের হার ফেব্রুয়ারির পর থেকে দ্রুততম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের প্রধান ব্যবসায়িক অর্থনীতিবিদ ক্রিস উইলিয়ামসন বলেন, ‘নভেম্বরের সংকোচন ছিল সামান্য। তবে এটি আগামী বছরের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রতিফলিত করে।’ এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ফ্ল্যাশের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) নভেম্বরে ৫১ দশমিক ৮ থেকে কমে ৪৯ দশমিক ৯-এ নেমেছে। সূচকটি কোম্পানি ম্যানেজারদের মধ্যে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে।
উইলিয়ামসন বলেন, ‘বাজেটের পর থেকে ব্যবসায়িক আশাবাদ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। নভেম্বরে এটি আরো কমে ২০২২ সালের শেষের দিকের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাজেটে ঘোষিত নীতিগুলোর ব্যাপারে কোম্পানিগুলো স্পষ্টভাবে ‘নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে।
এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে আরো দ্রুত চাকরি ছাঁটাইয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেছে। গত মাসে বাজেটসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে অফলাইন ও অনলাইনে বিক্রি কমে গেছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানিয়েছে, গত অক্টোবরে বিক্রির পরিমাণ মাসিকভিত্তিতে দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে বিক্রি বাড়ার হার দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সংশোধিত দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী বছরের শুরুতে মজুরির বৃদ্ধি ও নিম্ন মূল্যস্ফীতির ফলে বাড়তি আয় খুচরা বাজারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে। তবে বাজেট-পরবর্তী পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এটি সম্ভব নয়।
রিভস গত ৩০ অক্টোবর বাজেটে কর বাড়ানোর বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করেছিলেন। তবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের হার বাড়ায় তাদের ৭০০ কোটি পাউন্ড অতিরিক্ত খরচ হবে।
পোশাক দোকানগুলো ভোক্তাদের মিতব্যয়ী কেনাকাটার কারণে গত মাসে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া পোশাক ও জুতার দোকানগুলোয় বিক্রি ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে, যা যেকোনো খাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। খাদ্য ব্যতীত অন্যান্য দোকানের বিক্রি ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। সুপারমার্কেট ও খাদ্য দোকানগুলোর বিক্রি দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। তবে গৃহস্থালী পণ্য বিক্রি দশমিক ১ শতাংশ ও জ্বালানি বিক্রি দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।
মাসিকভিত্তিতে কমলেও ওএনএস জানিয়েছে, প্রান্তিকভিত্তিতে বিক্রির পরিমাণ দশমিক ৮ শতাংশ ও বার্ষিকভিত্তিতে ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ায় ব্রিটিশ মুদ্রা স্টার্লিং ডলারের বিপরীতে ছয় মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। স্টার্লিং ১ দশমিক ২৫৫ ডলারে নেমেছে, যা মে মাসের পর থেকে সবচেয়ে কম। অর্থনৈতিক উদ্বেগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পতন ঘটেছে। (খবরঃ গার্ডিয়ান)।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন