ক্যারিবিয়ানে অবস্থিত যুক্তরাজ্যের এই বিদেশি অঞ্চলটি ৫০টিরও বেশি দ্বীপ, ছোট দ্বীপ ও উপদ্বীপ নিয়ে গঠিত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এই অঞ্চলকে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে।
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ করস্বর্গ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কর ব্যবস্থার সুবিধা, আর্থিক গোপনীয়তা এবং নিয়ন্ত্রণের সীমাবদ্ধতা আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীদের কাছে এই অঞ্চলকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ক্যারিবিয়ানে অবস্থিত যুক্তরাজ্যের এই বিদেশি অঞ্চলটি ৫০টিরও বেশি দ্বীপ, ছোট দ্বীপ ও উপদ্বীপ নিয়ে গঠিত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এই অঞ্চলকে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে।
কৌশলগত করস্বর্গ
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এর সুবিধাজনক কর ব্যবস্থা। এখানে কর্পোরেট কর, সম্পত্তি কর, উত্তরাধিকার কর বা বিক্রয় কর নেই। এই কারণেই এটি অফশোর কোম্পানি বা বিদেশভিত্তিক কোম্পানি গঠনের জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
২০০৪ সালে প্রণীত বিজনেস কোম্পানিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, এখানে অফশোর ব্যবসা গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজতর। ফলে, এ পর্যন্ত ৬ লাখেরও বেশি কোম্পানি ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে নিবন্ধিত হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে নিবন্ধিত অফশোর কোম্পানির প্রায় ৪০ শতাংশ।
এই খাত থেকে অর্জিত লাইসেন্স ফি ও আর্থিক সেবা, যেমন অফশোর ব্যাংকিং এবং বিনিয়োগ, অঞ্চলটির মোট জিডিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের যোগান দেয়। উন্নত আইনি ও হিসাব কাঠামো ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জকে কেবল সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক পরিকল্পনায় শক্তিশালী ভিত্তি দেয়নি, এটি কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও পানামার মতো অন্যান্য শীর্ষ করস্বর্গের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করছে।
বিতর্ক ও সংস্কার
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বর্তমানে ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের কর্পোরেট ট্যাক্স হ্যাভেন ইনডেক্সে প্রথম স্থানে রয়েছে। কোন কোন অঞ্চল বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোকে অন্য দেশে কর ফাঁকি দিতে সাহায্য করে, তা এই সূচকের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ বিশ্বব্যাপী কর ফাঁকির ক্ষেত্রে ৭.১ শতাংশ ভূমিকা রাখে। এছাড়া, অঞ্চলটির অভ্যন্তরীণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বাহ্যিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে, প্রতিবছরের মোট বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেকই “ফ্যান্টম ইনভেস্টমেন্ট” বলে চিহ্নিত। এই ধরনের বিনিয়োগ বাস্তবে অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলে না; বরং এটি কর কমানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পানামা পেপার্সের মতো তথ্য ফাঁস বিশ্বব্যাপী আর্থিক দুর্নীতিতে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের ভূমিকা সামনে এনেছে। অফশোর সুরক্ষা সংস্থার মতে, এই অঞ্চলটি কর ফাঁকির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে।
এই সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা মাল্টিলেটারাল কনভেনশন অন মিউচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ট্যাক্স ম্যাটারস-এ স্বাক্ষর করেছে এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) নীতিমালা মেনে চলছে।
এসব উদ্যোগ অঞ্চলটিকে বৈশ্বিক পর্যবেক্ষকদের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। পাশাপাশি, ব্যবসায়িক গোপনীয়তা বজায় রেখে বৈধতা পুনরুদ্ধারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। (সূত্রঃ দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন