ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্য নিজেদের প্রত্যাহারের কয়েক বছর পরও সাবেক জোটের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক এখনো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের ধরন কী হতে যাচ্ছে তা নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এখন এ বিষয়ে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে ইইউ ও ট্রাম্প প্রশাসন দুটি পক্ষ এসেছে দেশটির সামনে। তবে বিশ্লেষকদের বড় অংশ বলছে, লেবার সরকার পুরনো জোটগত মিত্র ইইউকে বেছে নেবে। আবার কেউ কেউ ভারসাম্য রক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে অর্থনীতি বিষয়ে সুরক্ষাবাদী নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ কারণে সর্বজনীন শুল্কের মুখোমুখি হতে পারে বিদেশী পণ্য। এ নিয়ে কতটা দরকষাকষি বা সুবিধা নেয়া সম্ভব তা নিয়ে বিভিন্ন দেশ ও জোট বিশ্লেষণ করছে। একই প্রশ্ন যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সাবেক প্রধান প্যাসকেল ল্যামি বলেন, ‘সম্ভাব্য বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে আশঙ্কা বাড়তে থাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন আসন্ন মার্কিন প্রশাসনের পরিবর্তে যুক্তরাজ্যের উচিত বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে ইইউর পক্ষ নেয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করাতেই যুক্তরাজ্যের স্বার্থ নিহিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপে তিন গুণ বেশি বাণিজ্যিক লেনদেন হয় যুক্তরাজ্যের।’
অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক অর্থনীতিবিষয়ক মার্কিন ভাষ্যকার স্টিফেন মুর বলেন, “ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্ভব করতে যুক্তরাজ্যের উচিত ইইউর ‘সমাজতান্ত্রিক মডেল’ থেকে বেরিয়ে আসা। এ ধরনের চুক্তি ছাড়া ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের রফতানি ২০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে।’
স্টিফেন মুরের বক্তব্যের পর ২০০৫-১৩ সাল পর্যন্ত ডব্লিউটিওর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্যাসকেল ল্যামি বিষয়টি নিয়ে বিপরীত মন্তব্য করেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি অবজারভারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ল্যামি বলেন, ‘ব্রেক্সিট ও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে পুরনো প্রশ্ন নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আমার দৃষ্টিতে যুক্তরাজ্য একটি ইউরোপীয় দেশ। এর আর্থসামাজিক মডেলটি ইইউর সামাজিক মডেলের অনেক কাছাকাছি। তবে ট্রাম্প ও ইলোন মাস্কের পুঁজিবাদের মতো কঠোর ও নৃশংস নয়। আমরা আশা করতেই পারি যে ট্রাম্প ও মাস্ক এ দিকেই আরো এগিয়ে যাবেন। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে সরে যান, তাহলে যুক্তরাজ্য যে ইউরোপের পক্ষে থাকবে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংখ্যা বিবেচনা করতে হয়। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যের পরিসর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিন গুণ বড়। বিষয়টি কাঠামোগতভাবে আন্তঃনির্ভরশীল এবং পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম, যদি না খুব অবাস্তব কিছু ঘটে। যুক্তরাজ্য ইইউর মানদণ্ডের নিয়ম ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, একে আমি বাস্তবসম্মত অনুমান বলে মনে করছি না। আমার উত্তর হচ্ছে, ইউরোপের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার যে বিকল্প তার কোনো মানে হয় না।’
ইইউর সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ইভান রজার্স বলেন, ‘ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে তা স্পষ্ট।’ তবে লন্ডনে ইইউর সাবেক রাষ্ট্রদূত জোয়াও ভেল ডি আলমেইদা মনে করেন ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়কে দরকার যুক্তরাজ্যের। এ কারণে ন্যূনতম বাস্তবসম্মত চুক্তির জন্য যুক্তরাজ্যকে একটি সাধারণ ভিত্তি তৈরি করতে হবে।
এদিকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অভিঘাত তৈরি করতে পারে। এতে দেশটির জিডিপি প্রায় ১ শতাংশ সংকোচন হতে পারে। (খবরঃ দ্য গার্ডিয়ান)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন