বৈশ্বিক খাদ্য আমদানি ব্যয় ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারে। বৈশ্বিক খাদ্য আমদানি ব্যয় ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারে। মূলত কোকো, কফি ও চায়ের উচ্চ মূল্য এবং ফল ও সবজির দাম বাড়ায় আমদানি খরচ ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ‘ফুড আউটলুক’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর কোকো, কফি ও চায়ের আমদানি ব্যয় ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তে পারে। আমদানি ব্যয়ের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে এ খাতের অবদান ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ও সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কিত সমস্যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
চলতি বছর কোকোর দাম গত ১০ বছরের গড়ের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেড়েছে। কফির দাম দ্বিগুণ ও চায়ের দাম দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
পানীয় পণ্যগুলোর রফতানি অনেক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বুরুন্ডি ও ইথিওপিয়ার খাদ্য আমদানির খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ কফি রফতানির আয় দিয়ে মেটানো হয়। শ্রীলংকার ক্ষেত্রে চা রফতানি খাদ্য আমদানি খরচের অর্ধেকের বেশি পূরণ করে। আইভরি কোস্টের কোকো রফতানি দেশটির মোট খাদ্য আমদানি ব্যয়কেও ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে এফএও বলছে, এ বছর বিশ্বব্যাপী শস্য ও তেলবীজের আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের দেশগুলো কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। বৈশ্বিক খাদ্য আমদানি ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশই করে থাকে উচ্চ আয়ের দেশগুলো। চলতি বছর এ ব্যয় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে উচ্চ-মধ্যম, নিম্ন-মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর আমদানি ব্যয় কমতে পারে।
প্রতি দুই বছর অন্তর ‘ফুড আউটলুক’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এফএও। এতে প্রধান খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, বাণিজ্য, ব্যবহার ও মজুদের পূর্বাভাস প্রদান ও বিশ্লেষণ করা হয়। সাম্প্রতিক সংখ্যায় বিশেষভাবে অলিভ অয়েল ও সারের বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এফএওর সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, বেশির ভাগ খাদ্যপণ্য উৎপাদনের পরিস্থিতি ইতিবাচক। তবে বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও নীতিগত পরিবর্তনের কারণে চাহিদা সরবরাহের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এতে খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। গমসহ দানাদার শস্য উৎপাদন চলতি বছর কমতে পারে। তবে চাহিদার অনুপাতে তা বেশি হবে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চালের ব্যবহার, মজুদ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়তে পারে।
এদিকে খাদ্য ঘাটতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় গমসহ দানাদার শস্যের মাথাপিছু খাদ্যগ্রহণ কমতে পারে। তবে চালের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এফএও চলতি বছর বিশ্বে মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন সামান্য বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এফএও। তবে এ সময় চিনি উৎপাদন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এফএও বলছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্য উৎপাদন ২ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে। এর পেছনে অ্যাকোয়াকালচারের (জলজ চাষ) ভূমিকা রয়েছে। সয়াবিন ও পাম অয়েল উৎপাদন বাড়তে পারে। তবে রেপসিড ও সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে স্পেনে অলিভ অয়েল উৎপাদন ১০ বছরের গড়ের তুলনায় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এফএও। গ্রিস, তিউনিসিয়া ও তুরস্কেও উৎপাদন বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। সংস্থাটির মতে, উচ্চ দামের কারণে চলতি বছর অলিভ অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার কমতে পারে।
খবর : এগ্রিল্যান্ড।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন