২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্মার্টফোন বাজারের আকার বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এ সময় ডিভাইস বিক্রি হয়েছে ২৫০ লাখ ইউনিট। এ অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বাজার হিস্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে চীনের কনজিউমার ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অপো। সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বাজারে কোম্পানিটির হিস্যা ছিল ২১ শতাংশ। অপো এ সময় স্মার্টফোন বিক্রি করেছে ৫১ লাখ ইউনিট। বাজার গবেষণা সংস্থা ক্যানালিসের গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ক্যানালিসের তথ্যানুযায়ী, অপোর নতুন দুটি মডেল এথ্রি ও এথ্রিএক্স গত প্রান্তিকে বিক্রি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। অপোর পর এ তালিকায় ১৬ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার টেক জায়ান্ট স্যামসাং। এরপর ৪০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি ও ১৬ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীনা মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সশন। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রান্সশনের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ধীর হতে শুরু করেছে। কারণ তারা বাজার হিস্যা বাড়ানোর চেয়ে মুনাফা ও মূল্যবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ট্রান্সশন মালিকানাধীন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে টেকনো ও ইনফিনিক্স। তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি শাওমি। এ সময় ব্র্যান্ডটির বাজার হিস্যা ছিল ১৫ শতাংশ ও বিক্রি ৩৯ লাখ ইউনিট। গত প্রান্তিকে শাওমির কিছু সাশ্রয়ী মডেল যেমন রেডমি ১৪সি ও এথ্রির বিক্রি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। শীর্ষ পাঁচে থাকা ভিভোর বাজার হিস্যা ১০ শতাংশ ও বিক্রি ২৬ লাখ ইউনিট।
তবে গত প্রান্তিকে এ অঞ্চলে স্মার্টফোন বিক্রির সংখ্যা বাড়লেও গড় বিক্রির মূল্য (এএসপি) ৪ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন ক্যানালিসের বিশ্লেষক শেং উইন চো। তিনি বলেন, ‘স্মার্টফোনের দাম কমার মূল কারণ লো-এন্ড ও মিড-রেঞ্জ ফোনগুলোর উপস্থিতি বাজারে অনেক বেশি। গত প্রান্তিকে এসব রেঞ্জের বেশকিছু নতুন মডেল মুক্তি পেয়েছে। দাম কমানো ছাড়া বাকি সব ব্যান্ড থেকে অন্য কোনোভাবে পার্থক্য তৈরি করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। তাই তারা বিক্রি বাড়ানোর জন্য প্রচারণা ও ছাড়ের ওপর নির্ভর করছে। তবে পুরনো মডেলে বড় ছাড় দেয়ার ফলে বিড়ম্বনা তৈরি হচ্ছে। ফলে ক্রেতারা নতুন মডেলকে বেশি দামি মনে করছেন। দাম নিয়ে এ যুদ্ধ চালিয়ে নেয়া এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। কাঁচামাল ও মূল্যস্ফীতির কারণে বিক্রি কার্যক্রম চালানোয় বাধা আসছে, যা কোম্পানির লাভের ওপর চাপ ফেলছে।’
এদিকে ক্যানালিসের বিশ্লেষক লে জুয়ান চিও বলছেন, ভিয়েতনামের ফাইভজি পরিস্থিতি পরিবর্তনের কারণে এটি মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোন বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। তবে ফাইভজি ডিভাইস তৈরির উচ্চ খরচ সাশ্রয়ী ফাইভজি স্মার্টফোন লঞ্চ করা কঠিন করছে। এ কারণে সাম্প্রতিক প্রান্তিকে উপকৃত হয়েছে অপো। ১৭৫-২৫০ ডলার মূল্যের প্রতিযোগিতামূলক ফোরজি ডিভাইসের শক্তিশালী লাইনআপ নিয়ে বাজার হিস্যা দখল করতে পেরেছে কোম্পানিটি। বিশ্লেষক লে জুয়ান চিও উল্লেখ করেছেন, যদিও বর্তমানে স্মার্টফোনের গড় বিক্রিমূল্য কমছে, তবে ক্যানালিস ভবিষ্যতে এটি বাড়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যকে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করতে এবং গ্রাহকের নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে টার্গেট করতে বিভিন্ন বিপণন ও বিক্রি কৌশল ব্যবহার করছে। অপো ও স্যামসাং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রেতাদের কাছে ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে হাই-এন্ড স্টোর পরিচালনার জন্য বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। অনর এবং শাওমি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়াচ্ছে, যেন আরো বড় পরিসরে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো যায়।’
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন