মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় গত অক্টোবরে চীনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) বা চিপ উৎপাদন ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় গত অক্টোবরে চীনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) বা চিপ উৎপাদন ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্থরগতির আইসি উৎপাদন দেশটির অভ্যন্তরীণ সেমিকন্ডাক্টর খাতে চাহিদা কম থাকার ইঙ্গিত দেয়। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের শেষ দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো।
চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) প্রকাশিত শুক্রবারের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবরে চীনের আইসি উৎপাদন গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় মোট উৎপাদন পৌঁছেছে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি ইউনিটে। তবে সংখ্যাটি সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ইউনিটের তুলনায় কিছুটা কম। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি উৎপাদনের পরিমাণ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ বা সূচক। এগুলোর উৎপাদন ট্র্যাক করা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা ও আকার বোঝার জন্য সহায়ক।
এনবিএস বলছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাস (জানুয়ারি-অক্টোবর) চীনের মোট আইসি উৎপাদন ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি ইউনিটে পৌঁছেছে। যদিও প্রযুক্তিগত বাধা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে চীন উন্নত চিপ তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে, তবে পুরনো ও কম উন্নত চিপের উৎপাদন ক্রমাগত বেড়েছে। ২০২৪ সালে চীনের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল দ্বিতীয় শিল্প সেমিকন্ডাক্টর। এ দৌড়ে এগিয়ে আছে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)।
চায়না অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিএএএম) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চীনের ইভি উৎপাদন ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় গাড়ি উৎপাদন পৌঁছেছে ৯৯ লাখে। শুধু অক্টোবরে চীন ১৪ লাখের বেশি ইভি উৎপাদন করেছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এদিকে চীনে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শিল্পে ব্যবহৃত রোবট উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো। অক্টোবরে এ উৎপাদন ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, চীন ২০২৪ সালের প্রথম ১০ মাসে সেমিকন্ডাক্টর পণ্য রফতানি করেছে ১৩ হাজার ৯০ কোটি ডলার মূল্যের। সংখ্যাটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। চীনের মূল রফতানি পণ্যগুলোর মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর রফতানি জানুয়ারি-অক্টোবর সময়কালে স্মার্টফোন রফতানিকেও ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের লক্ষ্য স্মার্টফোনে ব্যবহৃত উন্নত চিপ বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করা, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে ডাচ কোম্পানি এএসএমএলের কাছ থেকে সবচেয়ে উন্নত লিথোগ্রাফি সিস্টেম কেনা সম্ভব হয়নি চীনের পক্ষে। এএসএমএল প্রযুক্তি প্রায় একাই এক্সট্রিম ইউভি (ইইউভি) লিথোগ্রাফি যন্ত্রপাতির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি কোয়ালকম ও অ্যাপলের মতো খুব ছোট আকারের চিপ তৈরি করতে সহায়ক।
এদিকে তাইওয়ানের টিএসএমসি এরই মধ্যে চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ ডেভেলপারদের জন্য ৭-ন্যানোমিটার চিপ উৎপাদন সেবা স্থগিত করেছে। স্যামসাং ইলেকট্রনিকসও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। (খবরঃ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন