কোটি ডলারের শিল্পকর্ম ভারতকে ফিরিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে চুরি যাওয়া শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধারের একটি চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র গত বুধবার ১ হাজার ৪০০ টির বেশি শিল্পকর্ম ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
এই মূল্যবান শিল্পকর্মগুলোর মোট মূল্য প্রায় ১ কোটি ডলার। উদ্ধারকৃত জিনিসপত্রের মধ্যে কিছু নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে (মেট) প্রদর্শিত হয়েছিল। এর মধ্যে একটি হলো, বেলেপাথরের মূর্তি, যা মধ্যভারত থেকে লন্ডনে পাচার হয় এবং পরে অবৈধভাবে মেটের একজন পৃষ্ঠপোষকের কাছে বিক্রি করা হয়।
ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নি অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই পুনরুদ্ধারটি বহু তদন্তের ফল। শিল্পকর্ম লুটের নেটওয়ার্ক ধরতে এ তদন্ত চলমান। এসব নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে, ন্যান্সি ওয়েনার এবং সুবাস কাপুরের মতো দাগি পাচারকারীরা। সুবাস কাপুর একজন প্রত্নসম্পদ ব্যবসায়ী, তাঁর নিউইয়র্ক গ্যালারির মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার মূল্যের শিল্পকর্ম লুটের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তিনি ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
২০১১ সালে জার্মানিতে গ্রেপ্তারের পর সুবাস কাপুরকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারতের তামিলনাড়ুতে পাঠানো হয়। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তিনি বর্তমানে ভারত সরকারের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চলছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনের নিউইয়র্ক শাখার বিশেষ এজেন্ট উইলিয়াম ওয়াকার এক সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, আজকের এই প্রত্যর্পণ বহু বছরের আন্তর্জাতিক তদন্তের আরেকটি বিজয়। চুরি হওয়া এই শিল্পকর্মগুলো নিউইয়র্কে ভারতীয় কনস্যুলেটে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতকে ফেরত দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা সাংস্কৃতিক সম্পত্তি রক্ষা এবং চুরি হওয়া প্রত্নসম্পদ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। এরপর গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ২৯৭টি প্রত্নসম্পদ ভারতকে ফেরত দেয়। এসব প্রত্নসম্পদ ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৪ হাজার বছর সময়ের মধ্যকার। এগুলো ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিল পূর্ব ভারতের মাটির কাজ (টেরাকোটা)। এ ছাড়া পাথর, ধাতু, কাঠ এবং হাতির দাঁতের তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্মও রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সাংস্কৃতিক সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ভারত–যুক্তরাষ্ট্র সাংস্কৃতিক সমঝোতা এবং আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
খবর: সিএনএন।