যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি প্রভাবিত করবে যুক্তরাজ্যের রপ্তানিকে। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ট্রেড পলিসির (সিআইটিপি) অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বাণিজ্য কমে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক রপ্তানি ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমতে পারে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের পণ্য প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকতে পারবে না। সেই নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। নতুন বিশ্লেষণ অনুসারে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা সব পণ্যে ২০ শতাংশ হারে সাধারণ শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাজ্যের প্রায় ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নির্বাচনী ইশতেহারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যে শুল্ক আরোপ করবেন। সাধারণভাবে ২০ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই বাণিজ্য হ্রাসের ফলে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক উৎপাদন বা জিডিপি বার্ষিক শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমতে পারে।
গবেষক নিকোলো ট্যামবেরি একটি ব্লগ পোস্টে উল্লেখ করেন, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প যেসব আক্রমণাত্মক অঙ্গীকার করেছেন, তা যেমন আলোচনার কৌশল হতে পারে, তেমনি সেগুলো বাস্তবায়নেরও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত শুল্ক আরোপিত হলে যুক্তরাজ্যের যেসব প্রধান খাত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করা হচ্ছে তার মধ্যে আছে মৎস্য, পেট্রোলিয়াম ও খননশিল্প। এসব খাতের রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এছাড়া ওষুধ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খাতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি রপ্তানি করে না, তারাও এই শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন পরিবহন সেবা কোম্পানিগুলো, যাদের কার্যক্রম মূলত বাণিজ্যের গতির ওপর নির্ভরশীল, এই শুল্কের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিমা ও আর্থিক সেবা খাতও মূলত পণ্য বাণিজ্যের সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে কিছু খাত এই পরিস্থিতিতে সুবিধা পেতে পারে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমে যায়।
ট্রাম্পের চীনবিরোধী নীতির কারণে চীনের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে, সে কারণে এই খাতের প্রতিযোগিতা কমে গিয়ে যুক্তরাজ্যের সুবিধা হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন সীমান্ত শুল্ক ঠিক কতটা বাড়ানো হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিছু কূটনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের জন্য কম শুল্ক আরোপের বাস্তবসম্মত প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজার এই শুল্ক কৌশলের দৃঢ় সমর্থক। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সম্প্রতি বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করব এবং আমি বিশ্বাস করি, তারা এটি বুঝতে পারবে। সেটা হলো, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ক্ষতি করা মধ্যম বা দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষে যায় না, বিশেষ করে চীন–সম্পর্কিত কিছু সমস্যা সমাধানে নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রশাসনের অধীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লর্ড ড্যারোক সতর্ক করেছেন, যুক্তরাজ্যের উচিত হবে, শুল্ক আরোপের ঝুঁকি হালকাভাবে না নেয়া। তিনি বলেন, আমি হতাশাবাদী। ট্রাম্প তার প্রথম জমানায় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম খাতে শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবার তিনি অনেক বড় পরিসরে শুল্ক আরোপ করতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, এটা চালাকি নয়। আমি মনে করি, তিনি এটি করবেন। যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি উভয়ই বলেছেন, মুক্তবাণিজ্যের পক্ষে যুক্তিতর্ক চলবে। যুক্তরাজ্যকে হয়তো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যখন বাড়তি শুল্ক থেকে বাঁচতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে পার্শ্ব চুক্তি করার চেষ্টা করতে হবে।
খবর: বিবিসি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন