এটি সম্ভব হলে একটি বায়ুকলে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে, তার চেয়ে দ্বিগুন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।
গিকন গ্রুপ কর্মকর্তা ইওখেন গ্রোসমান বলেন, ‘‘চার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাধারণ উইন্ড টারবাইন বা বায়ুকল যে পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পারে তা এক মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বা গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত শক্তির সমান। আমরা জানতাম, বায়ুকলের উচ্চতা আরও বাড়ালে আরও বেশি শক্তি উৎপাদন সম্ভব হবে, কিন্তু জানতাম না, সেটি কীভাবে নির্মাণ করা সম্ভব। সে কারণে আমরা বাতাস পরিমাপক টাওয়ার নির্মাণ করেছি। এখন আমরা জানি যে, ৩০০ মিটার উঁচুতে রোটর বসানো গেলে জ্বালানি উৎপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব এছাড়া উচ্চতার কারণে এগুলো বর্তমানে যেসব জায়গায় টারবাইন আছে সেখানেই স্থাপন করা সম্ভব অবশ্যই একই টারবাইনে নয়, দুই টারবাইনের মাঝখানে।”
ইওখেন গ্রোসমান ও তার দল ২০১০ সালে টারবাইনের উচ্চতা বাড়ানোর স্বপ্ন পূরণের কাজ শুরু করে তারই অংশ হিসেবে বছরখানেক আগে এই বাতাস পরিমাপক টাওয়ার বানানো হয়। এটি বিশাল এক প্রকল্পের অংশ, টাওয়ার থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সাধারণ উচ্চতার টারবাইনের চেয়ে দ্বিগুন উচ্চতায় বাতাস আরও শক্তিশালী ও স্থির। বিশাল আকারের উইন্ড টারবাইন ভবিষ্যতে বায়ুশক্তির প্রসার ত্বরান্বিত করতে পারে।
গ্রোসমান জানান, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তা হলো উইন্ড টারবাইন স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া, এরপর জায়গাটি ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে ও অনুমোদন পেতেও সময় লাগে। তাই বর্তমানে যে জায়গাগুলোতে টারবাইন আছে সেগুলোই আমরা কাজে লাগাচ্ছি, ফলে অনুমোদনের জন্য তিন, পাঁচ বা সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে না বলে আগামী কয়েক বছরে বায়ুশক্তির প্রসার অনেক বাড়তে পারে।”
নতুন জায়গা খুঁজে পাওয়া একটা সমস্যা, অন্য সমস্যা হচ্ছে, টারবাইনের আকার, বিশাল রোটর ব্লেড ও সেটি স্থাপনের যে অবকাঠামো, তা পরিবহন করা বেশ কঠিন কাজ।
আরো উঁচুতে বায়ুকল
গ্রোসমান বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা বাইরের টাওয়ার বানাই, এরপর ভেতরেরটা সাধারণ উচ্চতায়, ধরুন সেটা ১৫০ মিটার, আমরা রোটর আর টারবাইন যুক্ত করি এরপর টেলিস্কোপিক স্টাইলে ভেতরের টাওয়ারটা টেনে উপরে তোলা হয়। সাধারণ বিদ্যুৎ টাওয়ারের মতো এক্ষেত্রেও আমরা জালি নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ, এটা সর্বাধুনিক ও সহজে বানানো যায় । বাজারে পাওয়া যায় এমন ব্লেড ও টারবাইন আমরা ব্যবহার করেছি অর্থাৎ নতুন এক প্রযুক্তিতে পৌঁছাতে বেশ কয়েকটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।”
উঁচুতে স্থাপন করা যায় এমন বায়ুকলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী গ্রোসমান । এমন বায়ুকল তার সক্ষমতার ৫০ শতাংশ শক্তি উৎপাদন করতে পারে, এর সঙ্গে সাধারণ বায়ুকল ও সোলার প্যানেল এক করা গেলে একটি জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হবে।
পরিকল্পনাটা অবশ্যই আকর্ষণীয় কারণ, একইসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির তিনটি উৎস ব্যবহার সম্ভব হওয়ায় পর্যাপ্ত সবুজ জ্বালানি সরবরাহ করা যায়।
গ্রোসমান জানান, ‘‘আশা করছি, আগামী বছর বা তার পরের বছর আমরা প্রথম পাইলট প্ল্যান্ট বানাতে সক্ষম হব, যেটা পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, আমি যদি স্থানীয়ভাবে সবুজ জ্বালানি উৎপাদন করতে পারি, যেটা এই এলাকায় চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ তৈরি করবে, তাহলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।”
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের শিপকাউ শহর শিগগিরই রেকর্ড-গড়া বায়ুকলের শহর হয়ে উঠবে
আর ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানিতে বিদ্যমান উইন্ড ফার্মগুলোতে এক হাজার উঁচু বায়ুকল স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন গ্রোসমান।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন