ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ার মূল্য গত শুক্রবার সকালের মধ্যেই ৬ শতাংশ বেড়ে গেছে। এতে কোম্পানিটির বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর টেসলার শেয়ারের মূল্য এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফিরে আসা টেসলাকে অনেক উপকৃত করবে। কারণ টেসলার সিইও ইলন মাস্ক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে জুড়ে ট্রাম্পের প্রধান সহযোগী ছিলেন। শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে তিনি অন্তত ১৩০ মিলিয়ন বা ১৩ কোটি ডলার খরচ করেছেন। এই তহবিল ট্রাম্পের পুনর্র্নিবাচনের জন্য একটি সুপার প্যাক (পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি) গঠনে ব্যবহৃত হয়েছে।
শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্পের হয়ে প্রচারাভিযানে অংশ নেয়ার পাশাপাশি নিজের মালিকানাধীন এক্সে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের দিনগুলোতে মাস্ক ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোয় ভোটারদের উদ্দীপিত করতে প্রচারণা চালিয়েছেন। ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিদিন দশ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এ ধনকুবের। ট্রাম্পের এ ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দে ইলন মাস্কও সমান ভাগীদার। নির্বাচনের রাতে ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্পের সাথে বসে ভোটের ফলাফল প্রত্যক্ষ করেছেন মাস্ক। ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা যখন নিশ্চিত হতে শুরু করে, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মাস্ক লিখেন, আজ রাতে আমেরিকার জনগণ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, পরিবর্তন আনার জন্য স্পষ্ট ম্যান্ডেট দিয়েছে। পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে বিজয় ভাষণে, কয়েক মিনিট ধরে মাস্কের প্রশংসা করেন ট্রাম্প এবং তার প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর তৈরি একটি রকেটের সফল অবতরণের কথাও উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়—নির্বাচনের দিন পর্যন্ত টেসলার বাজারমূল্য ছিল ৮০৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। তখন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য সারা বছরে মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে এই বৃদ্ধি ২৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এর ফলে টেসলা ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি অভিজাত প্রযুক্তি ক্লাবে নাম লিখিয়েছে।
বর্তমানে বাজারমূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে টেসলা ছাড়াও আগে থেকে রয়েছে এনভিডিয়া, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট, অ্যামাজন এবং মেটা। এর মধ্যে মেটা ব্যতীত বাকি সব কোম্পানির বাজারমূল্য আসলে ২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরেও ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের মাইলফলক স্পর্শ করেছিল টেসলা। যদিও পরে এটি নামতে শুরু করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সংবাদ প্রচারের এক দিনের মাথায় এক্স, টেসলা, স্পেসএক্স ও নিউরালিংকের মালিক ইলন মাস্কের সম্পদ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। ব্লুমবার্গের বিলিওনিয়ারস ইনডেক্সের তথ্য মতে, শেয়ারের দাম বাড়ার ফলে ইলন মাস্কের বর্তমান মোট সম্পদমূল্যের পরিমাণ প্রায় ২৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৯ হাজার কোটি ডলার।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসনে মাস্ককে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার লক্ষ্য হবে সরকারি ব্যয় কমানো। মাস্ক মজা করে এ উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’ বা সংক্ষেপে ‘ডোজ’– যা জনপ্রিয় একটি মিম ও ক্রিপ্টোকারেন্সির নামও। ট্রাম্প প্রশাসনে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-এর জন্যও সম্ভাবনা বাড়বে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই সরকারি স্যাটেলাইট পাঠানোর ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। মাস্ক তার প্রতিদ্বন্দ্বী বোয়িংয়ের মতো কোম্পানিগুলোর সরকারি চুক্তির কাঠামো নিয়ে সমালোচনা করেছেন, যা তার মতে সময়মতো এবং বাজেটের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে নিরুৎসাহিত করে। স্পেসএক্স এখন গোয়েন্দা স্যাটেলাইট নির্মাণেও বিনিয়োগ করেছে, এমন সময়ে যখন পেন্টাগন ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই খাতে বড় ধরনের অর্থব্যয় করতে আগ্রহী।
খবর: সিএনবিসি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন