বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মূলধন ব্যয় চলতি বছর ২০০ বিলিয়ন বা ২০ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করতে পারে। আগামী বছরও এ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ অর্থের প্রায় সবটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করা হবে। তবে এসব বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত কতটা লাভজনক হবে তা নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম চার টেক কোম্পানি মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যামাজন ও গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট চলতি সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের কাছে জেনারেটিভ এআইয়ে বিনিয়োগের সুবিধা তুলে ধরেছে। কোম্পানিগুলোর দাবি, এটি তাদের পরিষেবাগুলোর কার্যকারিতা বাড়াচ্ছে এবং পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে জেনারেটিভ এআইয়ে বিনিয়োগের সুবিধা এখনো অস্পষ্ট। তা সত্ত্বেও কম্পিউটার চিপ ও ডাটা সেন্টার স্থাপনে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া এআই অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়ানোয় কোম্পানিগুলোর সামগ্রিক আর্থিক সক্ষমতাকেও প্রভাবিত করছে। এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট পুঁজিবাজারে পতন দেখা যায়।
চার বড় কোম্পানির মূলধন ব্যয় চলতি বছর আগের বছরের তুলনায় ৬২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে এ ব্যয় প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। মেটা ও অ্যামাজন আগামী বছর এ ব্যয় আরো বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, কোম্পানি চারটির মূলধন ব্যয় চলতি বছর ২০২৩ সালের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়ে ২০৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। সিটির পূর্বাভাস, মোট ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ডাটা সেন্টার স্থাপনে বিনিয়োগ হবে।
এসব বিনিয়োগের বাস্তব সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অ্যালায়েন্সবার্নস্টাইনের গ্রোথ স্টক বিনিয়োগকারী জিম টিয়ারনি। তিনি বলেন, ‘এসব কোম্পানি অতিরিক্ত অর্থ খরচ করছে। ২০২৫ সালে কোম্পানিগুলোর মুনাফার ওপর এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠবে।’ মাইক্রোসফট ও গুগলের ক্লাউড বিভাগের পরিসর বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে স্পষ্ট জেনারেটিভ এআইয়ের চাহিদার কারণে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ব্যবসার প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। এতে কিছুটা আশা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু মাইক্রোসফট সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছে, সরবরাহ কমে যাওয়ায় তাদের ক্লাউডের বৃদ্ধির হার চলতি প্রান্তিকে কমে যাবে। অন্যদিকে ক্লাউড ব্যবসায় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের প্রবৃদ্ধির হারও প্রত্যাশার চেয়ে কমে গেছে। যদিও কোম্পানিটি পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি মুনাফা ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ ধরে রেখেছে। চলতি সপ্তাহে অ্যালফাবেটসহ আয় বিবরণী প্রকাশ করা কোম্পানিগুলো এআইয়ের আয় নিয়ে একাধিক অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অ্যালফাবেট বলেছে, তাদের সার্চ ইঞ্জিনে যুক্ত করা নতুন জেনারেটিভ এআই ফিচারগুলো এনগেজমেন্ট বাড়াচ্ছে এবং ব্যবহারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কোম্পানিটি আরো জানিয়েছে, তাদের তৈরি এক-চতুর্থাংশ সফটওয়্যারের কোড এখন এআই দ্বারা লেখা হচ্ছে।
তবে জিম টিয়ারনি বলেন, ‘গুগলের সার্চ ভলিউম বাড়ার হার আগের প্রান্তিকের তুলনায় কমে গেছে। এতে এআইয়ের প্রভাব কতটা শক্তিশালী তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন সামনে এসেছে।’
এদিকে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, এআই থেকে তাদের আয় বার্ষিক ১ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করতে যাচ্ছে। এটি ইতিহাসে দ্রুততম মাইলফলক। কোম্পানিটি আরো জানায়, কো-পাইলট ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসে ব্যবহারকারীদের থেকে ৩০ ডলার ফি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া মাইক্রোসফট এম৩৬৫ প্রডাক্টিভিটি সফটওয়্যারের নতুন একটি প্যাকেজ বিক্রি থেকেও ভালো আয় হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলো এআইয়ের আয় নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। (খবরঃ ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস)।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন