যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি বছর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে বলে একমত বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ। নতুন চাকরি, ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি, সুদহার ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস, ব্যবসায় বিনিয়োগ এবং ওয়াল স্ট্রিটে নতুন রেকর্ড দেখা গেছে সাম্প্রতিক মাসগুলোয়। তা সত্ত্বেও দ্য গার্ডিয়ানের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সুবিধা সাধারণ আমেরিকানরা খুব সামান্যই ব্যবহার করতে পারছে। বরং মার্কিন অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীন অবস্থা বিরাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই সময় দেশজুড়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। দুজনেরই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আলাদা ছিল। এর মধ্যে সুরক্ষাবাদী অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়লাভ করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমদানিতে শুল্ক আরোপ, করপোরেট কর কমানো এবং অভিবাসনে কঠোরতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তার পরিকল্পনা। ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক নানা স্তরের মধ্যে বৈষম্য রয়ে গেছে। এ বৈষম্য নিরসনে কর্মসূচি দেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নর্থ ক্যারোলিনার ৬২ বছর বয়সী জিম হোয়াইট জানান, তিনি এখন আর বাইরে ঘুরতে যান না। তার মতে, ‘ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে, আর বাকি সবাই ডুবে যাচ্ছে।’ অনেক মানুষ বলেছে, তাদের আয় জীবনের মৌলিক চাহিদার উচ্চ খরচের সঙ্গে মেলাতে পারছে না। কেউ কেউ স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি নিয়ে সামান্য আশাবাদ প্রকাশ করলেও মতামত দেয়া বেশির ভাগই বিপরীত কথা বলেছেন। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতি আর্থিকভাবে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে এবং তাদের আয় মোটেও বাসস্থান, খাদ্য, শিশু যত্ন, বীমা, স্বাস্থ্যসেবা, জ্বালানি, সাবস্ক্রিপশন এবং বিনোদনের উচ্চ খরচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না।
মিসৌরির ৪০ বছর বয়সী রোক্সেন ওয়েশ বলেন, ‘অর্থনীতি আশ্চর্যজনকভাবে শক্তিশালী মনে হচ্ছে। ভালো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে, সুদহার কমেছে ও আরো কমতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু প্রায় সবাই এখনো মহামারীর আগের আর্থিক সুরক্ষার স্তরটি উপভোগ করতে পারছেন না।’
তরুণদের পাশাপাশি অনেক পেনশনভোগী ও নির্দিষ্ট আয়সীমার মানুষ নিম্ন সুদহার নিয়ে অসন্তুষ্ট। ফ্লোরিডার একজন বিনিয়োগকারী জানান, অর্থনীতির ওপর স্টক মার্কেটের মুনাফা ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু নিউইয়র্ক, মিয়ামি ও মিলওয়াকির মতো জায়গায় গৃহহীন মানুষের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি মনে করেন যে যুক্তরাস্ট্রে ট্রিকল-ডাউন অর্থনীতি বা চুইয়ে পড়ার তত্ত্ব ব্যর্থ হয়েছে। এ ভারসাম্যহীন অবস্থার জন্য কে দায়ী, সে বিষয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। কেউ কেউ জো বাইডেন প্রশাসনকে মহামারী চলাকালে অর্থনীতি সচল রাখতে আরোপিত হস্তক্ষেপের জন্য দায়ী করেন। অন্যদিকে কেউ আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং ওয়াল স্ট্রিট ও রিপাবলিকানদের দ্বারা সমর্থিত বৃহত্তর কাঠামোগত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী করেছেন।
জনমত জরিপে হতাশ ব্যক্তিদের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী ছিলেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন স্থপতি, আইনজীবী, প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। মার্কিন অর্থনীতি বেশির ভাগ নাগরিকের জন্য তেমন অর্থপূর্ণ বা কার্যকরী কোনো ধারণা নয় বলে দাবি করেছেন ৫৪ বছর বয়সী বুককিপার কারেনা ইয়াউটজ। আইডাহোর এ বাসিন্দা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ভয়ানক স্তরে পৌঁছে গেছে। ২০১৯ সালে আইডাহোর প্রায় ৪০ শতাংশ লোক পূর্ণকালীন কাজ করেও জীবনযাপনের খরচ বহন করতে পারত না। আমি জানি না, এখন এ সংখ্যা কত, তবে এটি সম্ভবত অনেক বেশি।’
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, মার্কিন অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নতি সত্ত্বেও আঞ্চলিক ও সামাজিক বৈষম্য রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে শুধু সূচকের উন্নয়ন যথেষ্ট নয়। তাই সমাজের প্রায় সব স্তরে অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন