যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির চিপ নির্মাতা ইন্টেল বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। কর্মক্ষমতার অবনতি ও অতীতের ভুল থেকে পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতার কারণে আর্থিক পরিস্থিতি ও সামগ্রিক সফলতা বাড়াতে কোম্পানিটি হিমশিম খাচ্ছে বলে জানান প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা। এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিপমেকার কোম্পানিটি সম্প্রতি তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইন্টেলের ৫৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লোকসানের কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইন্টেলের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার। এ লোকসানের অন্যতম দুটি কারণ কোম্পানির সম্পদমূল্য কমে যাওয়া ও পুনর্গঠনের জন্য গত আগস্টে ১৫ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত। ইন্টেলের মুনাফা কমতে থাকার কারণে কোম্পানির সিইও প্যাট গেলসিঞ্জার আগস্টে একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা শুরু করেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় উৎপাদন প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য উচ্চ খরচই এ পতনের জন্য দায়ী বলে জানায় ইন্টেল। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চিপের ক্রমবর্ধমান বাজারেও তারা ভালো করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনগুলো বলছে, প্যাট গেলসিঞ্জার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিইও হওয়ার পর থেকে ইন্টেলের শেয়ারমূল্য ৬০ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে কোম্পানির বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি কোম্পানিটি অধিগ্রহণ বা ছোট অংশে ভেঙে দেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রযুক্তিবিদদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ সুযোগগুলো কাজে না লাগানো ও এআইসংশ্লিষ্ট কৌশলে দুর্বলতার কারণে ইন্টেলের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
ইন্টেলের প্রতিবেদন বলছে, ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া প্রান্তিকে কোম্পানির মোট আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে হওয়া পতনের তুলনায় বেশি। তবে চলতি প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ইন্টেল ১ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার থেকে ১ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার আয়ের প্রত্যাশা করছে। গত বছরের একই সময়ে অবশ্য ১ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার আয় করেছিল কোম্পানিটি।
ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসর চিপ তৈরি করে, যা বেশির ভাগ কম্পিউটারের জন্য ‘ইলেকট্রনিক মস্তিষ্ক’ হিসেবে কাজ করে। সম্প্রতি ব্যক্তিগত কম্পিউটারের চাহিদা বাড়ায় উপকৃত হয়েছে কোম্পানিটি। তবু তৃতীয় প্রান্তিকে এ ব্যবসায় বিক্রি কমেছে ৭ শতাংশ। এছাড়া ইন্টেল ডাটা সেন্টার মার্কেটেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে এটি সার্ভারের জন্য চিপ তৈরিতে প্রধান কোম্পানি ছিল। এক্ষেত্রে এনভিডিয়ার মতো প্রতিযোগীরা এআই অ্যাপ্লিকেশনের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত চিপ বিক্রি করে দ্রুত এগিয়ে গেছে। তবে ইন্টেল জানিয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তাদের ডাটা সেন্টার ব্যবসায়ের আয় সর্বশেষ প্রান্তিকে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে আগস্টে কোম্পানির সিইও ও অন্যান্য বোর্ড সদস্যের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে উচ্চ পর্যায়ের বোর্ড সদস্য লিপ-বু টান পদত্যাগ করেন। ইন্টেলের সূত্র জানায়, বিদায়ী পরিচালক লিপ-বু টান কোম্পানির বেশ কয়েকটি বিষয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জনবল, ঝুঁকিবিরুদ্ধ সংস্কৃতি ও কোম্পানির এআই কৌশল নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্টেলের সূত্র জানায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টান কোম্পানির বৃহৎ কর্মীসংখ্যা, চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন পদ্ধতি ও ঝুঁকি নিতে কোম্পানির অনীহার বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। টানের মতে, ইন্টেলে অনেক অদক্ষ কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া তিনি মনে করছেন, কোম্পানিটি প্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক নয় ও কৃত্রিম এআইয়ের প্রতি ইন্টেলের পদ্ধতি যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক ছিল না। আর তাই তারা চিপ শিল্পে পিছিয়ে পড়েছিল। এসব কোম্পানির সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পরিচালক পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। (খবরঃ দ্য নিউইয়র্ক টাইমস)।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন