ইউরোপে বড়-ছোট কৃষি খামারে আয়ের ব্যবধান বেড়ে দ্বিগুণ – The Finance BD
 ঢাকা     বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

ইউরোপে বড়-ছোট কৃষি খামারে আয়ের ব্যবধান বেড়ে দ্বিগুণ

  • ০৩/১১/২০২৪

ইউরোপের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্র কৃষি খামারগুলোর মধ্যে আয়ের ব্যবধান গত ১৫ বছরে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ সময় ব্যবধান বেড়েছে দ্বিগুণ এবং ক্ষুদ্র খামারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। সম্প্রতি ইউরোপের কৃষি আয় নিয়ে গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) ফার্মিং অ্যাকাউন্ট্যান্সি ডাটা নেটওয়ার্ক (এফএডিএন) এবং ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যের দাম বাড়ায় ইউরোপজুড়ে কৃষকদের আয় রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। এতে কৃষি খাতের গড় আয়ের প্রবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকেও ছাড়িয়ে যায়। তবে আয়ের বেশির ভাগ হিস্যাই গেছে বড় খামারে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র খামারগুলো ন্যূনতম লাভে চলছে। এতে অনেক ক্ষুদ্র কৃষক আর্থিক সংকটে পড়ছেন এবং অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
সম্প্রতি ইসির প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েনের নেতৃত্বে কৃষক, খুচরা বিক্রেতা ও পরিবেশবাদীদের একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা ও দূষণ কমাতে সমন্বিতভাবে নতুন কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাবে বিতর্কিত ভর্তুকি ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক ইউরোপে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় বসার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক দেশের সরকার কৃষি খাতে বাড়তি বোঝা আরোপের অভিযোগ এনে পরিবেশ সংরক্ষণসংক্রান্ত নীতিমালার বিরোধিতা করছে। এর মাধ্যমে তারা গ্রামীণ অঞ্চলের জনসাধারণের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে। এসব অঞ্চলে ছোট কৃষি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অথবা বড় কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যাচ্ছে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, ২০১০-এর দশকে ৩০ হেক্টরের (৭৫ একর) চেয়ে ছোট এমন খামারের সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ কমেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অস্ট্রিয়ার সদস্য ও কৃষক থমাস ওয়েইৎজ বলেন, ‘কৃষক পরিবারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে এবং বড় খামারগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্ষুদ্র খামারগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।’
অনেক বিশ্লেষকের মতে, কৃষকদের গড় আয় বাড়ছে। ফলে কৃষি খাত লাভজনক নয় কিংবা বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশসংক্রান্ত ব্যয়সাপেক্ষ নিয়মকানুনের কারণে ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে, এমন কথা সরলভাবে বলার সুযোগ কম।
বিশ্লেষকের বড় অংশ বলেন, কৃষি খাতের এ সমৃদ্ধির আড়ালে এক বৈষম্যপূর্ণ বাস্তবতা রয়েছে। ২ হাজার থেকে ৮ হাজার পাউন্ড আয়সীমার ক্ষুদ্র খামারগুলোর কর্মীপ্রতি আয় এবং ৫ লাখ পাউন্ডের বেশি আয় করা খামারগুলোর কর্মীপ্রতি আয়ের ব্যবধান ২০২২ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কর্মীপ্রতি নিট মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হলে এ ব্যবধান ২০০৭ সালের ১০ গুণ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২০ গুণে পৌঁছেছে। কৃষি খাতে বিভিন্ন আকারের খামার তুলনা করতে এ পদ্ধতি সুবিধাজনক।
অন্যদিকে পারিবারিক খামারের আয়ের ভিত্তিতে পরিমাপ করলে (যেখানে কেবল দৃশ্যত মজুরিবিহীন শ্রমকে যুক্ত করা হয়) এ ব্যবধান ৩০ গুণ থেকে বেড়ে ৬০ গুণে পৌঁছেছে।
এছাড়া ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পাউন্ড আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খামারশ্রেণীর সঙ্গে তুলনা করা হলে ছোট খামারের আয়ের ব্যবধান প্রথম পদ্ধতিতে ৪৩ শতাংশ ও দ্বিতীয় পদ্ধতিতে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
আয়ের অসমতার আরেকটি পদ্ধতি গিনি সহগ অনুসারে, কৃষি খাতে সামগ্রিকভাবে বৈষম্য কিছুটা কমেছে। কেননা ক্ষুদ্র ও দরিদ্রতম খামারগুলো টিকে থাকতে গিয়ে আকার বাড়াতে বা বন্ধ হতে বাধ্য হয়েছে।
গ্রিনপিস ইইউর ইকোসিস্টেম ক্যাম্পেইনার সিনি এরাজা বলেন, ‘ছোট খামারগুলো সংকটে পড়েছে। গত মাসে গ্রিনপিসের এক বিশ্লেষণেও এ রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষকরা ‘‘আকার বাড়াও নয়তো বন্ধ করে দাও’’ ধরনের চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, রাজনীতিবিদদের উচিত পরিবেশগত বিধিনিষেধকে দোষারোপ না করে মৌলিক সমস্যাগুলোর দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা।
Source : Reuters

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us