মুখার্জী বলেন, কলকাতার এই অনন্য স্ট্রিট ফুডগুলোর সত্যিকারের স্বাদ পেতে পর্যটকদের কলকাতা শহরের অলি-গলিতে যাওয়া উচিত, যেখানে স্থানীয়রা বছরের পর বছর ধরে এমন সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে আসছেন। স্ট্রিট ফুডের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেশ নামডাক রয়েছে। কচুরি (আলুর তরকারির সঙ্গে পরিবেশন করা পোড়া পোড়া করে ভাজা পরোটা বা রুটি), ফুচকাসহ বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিট ফুডের দোকানে বছরজুড়েই কলকাতার সড়কগুলো জমজমাট থাকে। খবর বিবিসির। কলকাতার শেফ অরুণী মুখার্জী বলেন, প্রায়ই রেস্তোরাঁর শেফদের চেয়ে স্ট্রিট ফুডের শেফরা ভালো খাবার তৈরি করেন। এখানে বিভিন্ন দামের খাবার রয়েছে। তাই প্রত্যেকেই নিজের চাহিদামতো পছন্দের খাবারটি বেছে নিতে পারেন।
কলকাতার লোকেদের খাবারের বিশেষ এক ঐতিহ্য রয়েছে। যেমন, সন্ধ্যার জলখাবার (সন্ধ্যার হালকা নাস্তা)। লোকেরা কাজ শেষে ফেরার পথে সন্ধ্যায় এ খাবারটি খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার পরিবারের জন্যও খাবারটি প্যাকেট করে নিয়ে যান। পুরো ভারতে দুর্গাপূজা পালিত হলেও কলকাতার উৎসব সবচেয়ে চমকপ্রদ। উৎসব ঘিরে কলকাতার সড়কগুলো সাজে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। সড়কে জায়গায় জায়গায় গড়ে তোলা হয় অস্থায়ী মন্দির। আর এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ফুচকা, কচুরি, কাঠি রোল, কাটলেট ইত্যাদি স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলো। মুখার্জী বলেন, কলকাতার এই অনন্য স্ট্রিট ফুডগুলোর সত্যিকারের স্বাদ পেতে হলে কলকাতা শহরের অলি-গলিতে যাওয়া উচিত, যেখানে স্থানীয়রা বছরের পর বছর ধরে এমন সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে আসছেন। কলকাতার সড়কগুলোতে যেসব স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় তার মধ্যে বেছে বেছে সবচেয়ে সুস্বাদু ও চাহিদার শীর্ষে থাকা কয়েকটি খাবার ও এর শেফদের কথা জানিয়েছেন মুখার্জী। চলুন জেনে নেওয়া যাক মুখার্জীর চোখে সেরা সেই খাবারগুলো।
দিলীপ দা’র ফুচকা
ভারতীয়দের কাছে পছন্দের স্ট্রিট ফুড হলো ফুচকা। তবে কলকাতায় এটি অন্যতম বিশেষ খাবার। মুখার্জী বলছিলেন, খেতে ভালো নয় এমন ফুচকা পাওয়া বিরল। তবে তার পছন্দের ফুচকা হলো দক্ষিণ কলকাতার বিক্রেতা দিলীপ দাদার (সংক্ষেপে দিলীপ দা) ফুচকা। তিনি ৪০ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করছেন। কলকাতার বালীগঞ্জের হিমান্ত মুখার্জী সরণীতে তার দোকান। প্রতিদিন তিনি কম করে হলেও এক হাজারেরও বেশি পিস বেশি ফুচকা বিক্রি করেন।
মুখার্জীর কথায়, আপনি কলকাতার উত্তরে বা দক্ষিণে যে প্রান্তের ফুচকার স্বাদই নিন না কেন, কোথাও ফুচকার স্বাদে আপনি আহামরি তফাৎ খুঁজে পাবেন না। হয়ত কোনো দোকানি আপনাকে ফুচকার সঙ্গে মশলাদার ও টক পানীয় দেবে, কেউ হয়ত মিষ্টি পানীয় দেবে। তবে আমার কাছে দিলীপ দা’র ফুচকাই সেরা। কারণ, তিনি আপনাকে এ দুইয়ের মধ্যে সবচেয়ে সেরাটিই দেবেন।
সকালের নাস্তায় ‘সিঙ্গারা চাও’
কলকাতাবাসীর কাছে চাইনিজ খাবারেরও বেশ কদর রয়েছে। জন্মদিন, বিয়ে কিংবা পারিবারিক কোনো উৎসবে চিলি চিকেন ও চাওমিনের মতো খাবারগুলো খান তারা। কলকাতার টাংরা এলাকার সরু এক গলিতে অবস্থিত আহ লাং রেস্তোরাঁ। এখানে মাত্র পাঁচ ধরনের খাবার পাওয়া যায়। মুখার্জী জানান, এ পাঁচটি খাবারের মধ্যে তাদের চাওমিন অনন্য। আর এ কারণেই তার কাছে চাওমিনের জন্য সেরা পছন্দ আহ লাং।
মুখার্জী এই চাওমিনকে ‘সিঙ্গারা চাও’ হিসেবে বলে থাকেন। এ খাবারের থালায় থাকে হাতে তৈরি নুডুলস, যা সাদা মরিচ, পেঁয়াজ, সস ও পর্ক (শূকরের মাংস) দিয়ে পরিবেশন করা হয়। সকালের নাস্তায় কলকাতাবাসীর কাছে এ খাবারের জুড়ি নেই।
গরিয়াহাট বাজারের গীতা মাসির কচুরি ও পেটাই পরোটা
কলকাতায় সকালের নাস্তায় পছন্দের আরেকটি খাবার হলো কচুরি (আটা দিয়ে তৈরি এক ধরনের নরম রুটি) ও ছোলার ডাল। তবে ছোলার ডাল ছাড়াও আলুর তরকারি দিয়েও এ পরোটা পরিবেশন করা হয়। গড়িয়াহাট মাছের বাজারের পাশে এক কোণে গীতা মাসির স্টলটি। কলকাতাবাসীর কাছে তার তৈরি পেটাই পরোটারও কদর কম নয়। মূলত পরোটাটির তৈরির কৌশলের কারণেই এর এমন নাম। মশলাদার ঘুগনির (সাদা ছোলা) সঙ্গে এ পরোটা পরিবেশন করা হয়। মুখার্জী বলেন, ডালের সঙ্গে একটু ঘুগনি, সঙ্গে পেটাই পরোটা, সত্যিই অতুলনীয়।
তন্দুর পার্কের কাঠি রোল
এ খাবারটি প্রথম দিকে মূলত যাদের হাতে সময় কম, অর্থাৎ যাদের খাবারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ নেই, তাদের নাস্তার কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। ডিমে ভাজা পরোটা রোল করে এ খাবার তৈরি করা হয়। ভেতরে থাকে পোড়া পোড়া করে ভাজা মাংসের কাবাব। সঙ্গে পেয়াঁজ কুচি, সবুজ মরিচ। উপর ছিটিয়ে দেওয়া হয় মশলা, যা এ খাবারের স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
মুখার্জী জানান, সাধারণত সন্ধ্যার নাস্তায় কিংবা যারা একটু রাত করে শহরে ঘুরতে বের হন, তাদের কাছে এ খাবার বেশ জনপ্রিয়। শহরের বিভিন্ন জায়গায় কাঠি রোল পাওয়া গেলেও মুখার্জী এ খাবারটির জন্য তন্দুর পার্ককেই এগিয়ে রাখেন। তিনি জানান, এটি অনেক পুরনো একটি খাবার। শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ খাবার পাওয়া গেলেও সেগুলোর স্বাদে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু তন্দুর পার্কের কাঠি রোলগুলোয় পুরনো দিনের সেই স্বাদ আজও বিদ্যমান।
অ্যালেন কিচেন’র তেলেভাজা চিংড়ি কাটলেট
মুখার্জীর কাছে সেরা আরেকটি স্ট্রিট ফুড হলো ‘তেলেভাজা’। তার ভাষায় বৃষ্টি কিংবা শীতের কোনো সন্ধ্যায় ছোট ক্ষুধার সমাধানে মুড়ির সঙ্গে তেলেভাজা দারুন মুখরোচক একটি খাবার। মূলত তেলেভাজা বলতে বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, ফ্রাই করা বোম্বে ডাক মাছ এসব খাবারকে বোঝানো হয়েছে। তবে বেগুনি, আলুর চপ ছাড়াও কলকাতায় তেলেভাজা আরও বেশ কিছু মুখরোচক খাবার রয়েছে। যেমন কবিরাজি (চিকেন কাটলেট), ভেটকি ফ্রাই (এক ধরনের সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই)।
এসবের মধ্যে মুখার্জীর কাছে সবচেয়ে পছন্দের তেলেভাজা খাবার হলো কলকাতার যতীন্দ্র মোহন এভিনিউতে অবস্থিত অ্যালেন কিচেন’র চিংড়ি কাটলেট (ফ্রাই করা বড় আকৃতির চিংড়ি)। মুখার্জী জানান, এখানকার এই খাবারের বিশেষত্ব হলো এটি তেলে নয়, একদম খাঁটি ঘি দিয়ে ফ্রাই বা ভাজা হয়। যে কারণে অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানকার এই খাবারটির স্বাদ অন্যরকম। (সূত্রঃ দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন