বছরের বাকি সময় বিশ্বজুড়ে কমবে ইস্পাতের চাহিদা

ইস্পাতের বৈশ্বিক চাহিদা চলতি বছরের বাকি সময়ে আরো দশমিক ৯ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন (ওয়ার্ল্ডস্টিল)।
ইস্পাতের বৈশ্বিক চাহিদা চলতি বছরের বাকি সময়ে আরো দশমিক ৯ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন (ওয়ার্ল্ডস্টিল)। সংস্থাটির মতে, এ সময় প্রধান ভোক্তা দেশ চীনে ধাতবটির চাহিদা আরো কমে যাবে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাড়তে থাকবে। ২০২৫ সালে চাহিদা ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ওয়ার্ল্ডস্টিল তাদের সাম্প্রতিক স্বল্পমেয়াদি পূর্বাভাসে জানায়, ২০২৪ সালে ইস্পাতের চাহিদা ১৭৫ কোটি ১০ লাখ টনে নেমে আসবে। তবে ২০২৫ সালে ১৭৭ কোটি ২০ লাখ টনে পৌঁছবে। এর আগে বছরের শুরুতে ওয়ার্ল্ডস্টিল পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি বছরে চাহিদা ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১৭৯ কোটি ৩০ লাখ টনে পৌঁছবে। এছাড়া ২০২৩ সালে ১৮৩ কোটি ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনের প্রাক্কলন করা হয়েছিল, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
অর্থায়নের অভাব ও উচ্চ ব্যয়ের কারণে বিশ্বজুড়ে আবাসন শিল্প খারাপ পরিস্থিতি পার করছে। এর প্রভাবে ইস্পাতের চাহিদাও স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে করা হয়।
জার্মান স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওয়ার্ল্ডস্টিল ইকোনমিকস কমিটির চেয়ার মার্টিন থিউরিঙ্গার বলেন, ‘চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ইস্পাতের চাহিদা কমে যাচ্ছে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, কঠোর আর্থিক নীতিমালা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বৈশ্বিক উৎপাদন খাত খারাপ সময় পার করছে।’
চলতি বছর দুর্বল উৎপাদন খাত ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে চীনসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলোয় ইস্পাতের চাহিদা কমে যাওয়ার প্রাক্কলন করেছে ওয়ার্ল্ডস্টিল। তবে চলতি ও আগামী বছর ভারতে ইস্পাতের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে ভারতে ইস্পাতের চাহিদা ৮ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অবকাঠামোসহ ইস্পাত ব্যবহার হয়, এমন খাতগুলোয় প্রবৃদ্ধি ইস্পাতের চাহিদা বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখবে।
২০২১ সালের পর ইস্পাতের চাহিদা বাড়ানোয় সবচেয়ে শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে সামনে এসেছে। আগামী দিনগুলোয় এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ডস্টিল।
ভারতের মতো অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোয়ও ইস্পাতের চাহিদা নিয়ে আশাবাদী ওয়ার্ল্ডস্টিল। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের বাকি সময়ে অন্যান্য প্রধান উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোয় ইস্পাতের চাহিদা বাড়তে দেখা যাবে। এর আগে ২০২২-২৩ সালে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল তা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে তারা। চীন বাদে উন্নয়নশীল বিশ্বে ইস্পাতের চাহিদা ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৫ ও ২০২৫ সালে ৪ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে বলে জানায় ওয়ার্ল্ডস্টিল।
সংস্থাটি বলছে, আবাসন খাতে সমস্যার কারণে চীনে ইস্পাতের চাহিদা এখনো কম। ২০২৪ সালে দেশটিতে ইস্পাতের চাহিদা ৩ ও ২০২৫ সালে আরো ১ শতাংশ কমতে পারে। তবে সংস্থাটি বলেছে, ২০২৫ সালে চীনে ইস্পাতের চাহিদা বাড়াতে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য পদক্ষেপের কারণে বাড়তে পারে। দেশটিতে জুলাই ও আগস্টে যথাক্রমে ৯ ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ চাহিদা কমেছে।
২০২৫-২৬ সালের বৈশ্বিক ইস্পাত চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়ে ওয়ার্ল্ডস্টিল জানায়, চীনের আবাসন খাতে স্থিতিশীলতা অর্জনে অগ্রগতি, সুদহার সামঞ্জস্যের মাধ্যমে ব্যক্তিগত খরচ ও ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনগুলোয় ইস্পাতের চাহিদা বাড়বে।”এছাড়া বড় অর্থনীতির দেশগুলোয় ডিকার্বনাইজেশন ও ডিজিটাল রূপান্তরের কারণে অবকাঠামো ব্যয়ের প্রবণতাও এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র : হিন্দু বিজনেস লাইন।