ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, জমে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এখন পর্যন্ত নানা জরিপে এগিয়ে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তবে প্রচার-প্রচারণায় মোটেও পিছিয়ে নেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে জুমিয়ে উঠেছে অনলাইন জুয়া।
বড় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অনেককে ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক উল্লেখযোগ্য। ট্রাম্পের প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রিপ্টোকারেন্সির রাজধানী করার পরিকল্পনা ঘোষণার পরই মূলত ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকছেন তারা। ট্রাম্প নিজেও ক্রিপ্টোয় বিনিয়োগ করেছেন। এরই মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তহবিল সংগ্রহও শুরু হয়েছে। বিলিয়নিয়ার স্ট্যান ড্রাকেন মিলার বলছেন, বৈশ্বিক পুঁজিবাজার ও স্বর্ণের দাম বাড়ার পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সির বাড়তি দামও ট্রাম্পের আসন্ন বিজয়ের সূচক। এর প্রভাবই দেখা যাচ্ছে, ক্রিপ্টোভিত্তিক ফিউচার ট্রেডের অনলাইন বাজার পলি মার্কেটে। চারটি অ্যাকাউন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর বড় বাজি ধরেছে। অ্যাকাউন্টগুলো আমেরিকান নয়। গত শুক্রবার এই বাজি ধরা হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জনমত জরিপগুলোয় আগামী ৫ নভেম্বরের ভোটে ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে। তবে পলি মার্কেটের ক্ষেত্রে ভিন্ন রূপ দেখা যাচ্ছে, সেখানে ট্রাম্প ৬০ শতাংশ এবং কমলা হ্যারিস ৪০ শতাংশ।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি সূত্রের মতে, ট্রাম্পের পক্ষে অভূতপূর্ব বাজি ধরেছে চারটি অ্যাকাউন্ট। এরা ৩ কোটি ডলারের বেশি টাকার বাজি ধরেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ধারণা করছেন, হাইপ্রোফাইল আমেরিকানরা এই বাজির পেছনে থাকতে পারেন। কিন্তু পলিমার্কেট কখনও আমেরিকানদের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বাজি ধরার অনুমতি দেয় না। একটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স নিশ্চিত হয়েছে, পলি মার্কেটের ব্যবহারকারীরা আন্তর্জাতিক।
এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এই অস্বাভাবিক বাজির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পলি মার্কেট। ট্রাম্পের পক্ষে যে ৩ কোটি ডলারের বাজি ধরা হয়েছে, সেটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মটির মোট ট্রেডিং ভলিউমের প্রায় ১ শতাংশ!
আমেরিকানরা অনলাইনে নির্বাচন নিয়ে বাজি ধরার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। কমোডিটি ফিউচার ট্রেডিং কমিশন এ ধরনের বাজির ক্ষেত্রে আগে চুক্তি বা ডেরিভেটিভ অফার করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আরেকটি জুয়ার প্ল্যাটফরম কালশি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বাজি ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে সিএফটিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। একটি ফেডারেল আপিল আদালত গত ২ অক্টোবর কালশির পক্ষে রায় দেন। ফলে ভোটের এক মাস আগে নির্বাচন নিয়ে আমেরিকানদের বাজি ধরার পথ প্রশস্ত হয়েছে। কালশিতে ট্রাম্পের পক্ষে ৫৭ শতাংশ এবং হ্যারিসের পক্ষে ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিশ্বজুড়ে জমে উঠে জমজমাট জুয়ার আসর। নির্বাচনে কে হারবে, কে জিতবে, তা নিয়ে বাজি ধরা হয়। এক্ষেত্রে ২০২০ সালে বাজি ধরার রেকর্ড গড়ে ব্রিটিশ জুয়াড়িরা। তখন ২২ কোটি পাউন্ড বা ২৮ দশমিক ৪ কোটি ডলারের বাজি ধরেন দেশটির জুয়াড়িরা। ব্রিটেনের নির্বাচন বা কোনো স্পোর্ট বা খেলাধুলার ক্ষেত্রেও এমন দেখা যায়নি।
তার আগে ট্রাম্প-ক্লিনটন লড়াইকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের বাজিকররা ১৯ ওদিকে ৯ কোটি পাউন্ডের বাজি ধরেছিলেন। আর ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত ভোটাভুটি ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে বাজিকরদের হাত বদল হয়েছিল ১১ দশমিক ৩ কোটি পাউন্ড।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে গত ২০ সেপ্টেম্বর আগাম ভোট শুরু হয়েছে। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিটিতে নিজস্ব ভোটিং পদ্ধতি রয়েছে।
পোস্টের মাধ্যমে বা সশরীর গিয়ে আগাম ভোট, নির্বাচনের দিন ভোট বা এ তিনটি উপায়ে সমন্বিত ভোট সব ধরনের পদ্ধতিই রয়েছে অঙ্গরাজ্যগুলোয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পরিবারের যত দ্রুত সম্ভব ভোট দিয়ে ফেলা পারিবারিক ঐতিহ্য বলেও বিবেচিত হয়।
সূত্র : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও রয়টার্স।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন