যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি কভিডের পর সর্বোচ্চে – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি কভিডের পর সর্বোচ্চে

  • ২০/১০/২০২৪

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) ঋণের সুদ প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া দেশটির সামাজিক নিরাপত্তামূলক পেনশন কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ও সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) ঋণের সুদ প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া দেশটির সামাজিক নিরাপত্তামূলক পেনশন কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ও সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান এসব ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি। ২০২৪ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮৩ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা কভিড-১৯ মহামারীর পর সর্বোচ্চ। সম্প্রতি মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ২০২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বেড়ে ১ দশমিক ৮৩ ট্রিলিয়নে উন্নীত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি। এর আগে কভিড-১৯ মহামারীর সময় জরুরি সহযোগিতার কারণে ২০২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ও ২০২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৭৭ ট্রিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতি হয়েছিল দেশটিতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিক্ষা ঋণ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা বাতিলের মাধ্যমে বাজেট ঘাটতি কিছুটা কমিয়েছিলেন শেষবার। এর ব্যতিক্রম হলে বাজেট ঘাটতি ২ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেত। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সে পরিকল্পনা থেকে সরে আসে বাইডেন প্রশাসন। ২০২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পরের অর্থবছর তা বেড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেট ঘাটতির এ প্রভাব পড়বে য্ক্তুরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে। আর্থিক ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস নিজেকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় বেশি যোগ্য দাবি করছেন। কিন্তু মার্কিন অর্থনীতির এমন চিত্র তার দাবির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ফলে এ পরিস্থিতি নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের জন্য ইতিবাচক না-ও হতে পারে।
আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমিটি ফর আ রেসপন্সিবল ফেডারেল বাজেট পূর্বাভাস দিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কমলা হ্যারিসের প্রস্তাবিত আর্থিক পরিকল্পনাগুলোর ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনাগুলো ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন ঋণ সৃষ্টি করতে পারে।
বাজেট ঘাটতি বাড়লেও বাইডেন প্রশাসন গৃহীত নীতিমালা অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করেন হোয়াইট হাউজের বাজেট পরিচালক শালান্দা ইয়াং। এ প্রসঙ্গে তিনি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, অবকাঠামো ও উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগের উল্লেখ করেন। শালান্দা ইয়াং বলেন, ‘এর মাধ্যমে প্রশাসন আর্থিক দায়িত্বশীলতার প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করেছে। অতিধনী ব্যক্তি ও বড় করপোরেশনগুলো থেকে ন্যায্য কর আদায় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে।’
২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় ৪ দশমিক ৯২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বা ৪৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বেশি। স্বাধীন ও চু্ক্িতভিত্তিক কর্মরত ব্যক্তি এবং করপোরেট কর আদায়ও বেড়েছে। ২০২৪ অর্থবছরের ব্যয় ১০ শতাংশ বা ৬১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেড়ে ৬ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের ঋণের সুদ ২৯ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাজেট ঘাটতি বাড়ার এটাই ছিল প্রধান কারণ। ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণের সুদ বাবদ খরচ বেড়েছে, যা মেডিকেয়ার স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চেয়েও বেশি।
মার্কিন অর্থ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সুদ বাবদ ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি ১৯৯১ সালের রেকর্ড ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সে সময় জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল।’
গত সেপ্টেম্বরে ফেডের ঋণের গড় ওয়েটেড সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। তবে আগস্টে সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ওই মাসে ২০২২ সালের জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো গড় ওয়েটেড সুদহার কমে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় ৭ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক শূন্য ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ও সামরিক খাতে ৬ শতাংশ বেড়ে ৮২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ঘাটতি ছিল ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার। সরকার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে। মূলত সেপ্টেম্বরে প্রলম্বিত হওয়া ব্যয়ের কারণে এমন উদ্বৃত্ত দেখা যায়। অন্যথায় ১৬ বিলিয়ন ঘাটতি হতে পারত।
সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল রেকর্ড ৫২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যয় ছিল ৪৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা মূলত প্রলম্বিত ব্যয় সমন্বয়ের কারণে ২৭ শতাংশ কমেছে। (খবরঃ রয়টার্স)

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us