ডিজিটাল মাধ্যম দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে বিজ্ঞাপন প্রচারে নতুন নতুন বিকল্প তৈরি হয়েছে। এমনও ধারণা করা হচ্ছে, মুদ্রিত পত্রিকায় দিন দিন বিজ্ঞাপন সংকুচিত হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে সুখবর দিল ভারতীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকীগুলোর কেন্দ্রীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান নিউজপেপার সোসাইটি (আইএনএস)। সংস্থাটির সদস্যরা ২০২৩ পঞ্জিকা বর্ষে ছাপা সংস্করণে আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি বিজ্ঞাপন পেয়েছেন। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উল্লেখযোগ্যা কিছু কারণে এখনো ছাপা পত্রিকায় বিজ্ঞাপনদাতারা আগ্রহী হচ্ছেন।
২০২৩ সালে ভারতীয় ছাপা কাগজগুলো বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি ৪০ লাখ রুপি। ২০২২ সালে আয় করেছিল ১৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৩৪ লাখ রুপি।
বিশ্লেষকদের মতে, ডিজিটাল ও সম্প্রচারের বাড়বাড়ন্তের মাঝেও তিনটি প্রধান বিজ্ঞাপন মাধ্যমের একটি হিসাবে রয়ে গেছে মুদ্রিত পত্রিকা। কারণ এটি এখনো ব্র্যান্ডগুলোকে কাঙ্ক্ষিত বড় আকারের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ভূমিকা পালন করছে।
আইএনএসের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শীর্ষ বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট খাতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছিল। এ সময় আগের অর্থবছরের তুলনায় ইংরেজি দৈনিকের আয় ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৩৩ কোটি রুপি। অন্যদিকে স্থানীয় ভাষায় প্রকাশিত দৈনিকে আয় ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৬ কোটি ৫২ লাখ রুপি।
কর ও আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি ইন্ডিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মনপ্রিত সিং আহুজা জানান, ভারতের মুদ্রিত সংবাদপত্র শিল্প প্রাক-কভিড মহামারী স্তরের দিকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষার প্রকাশনাগুলো অন্যদের তুলনায় দ্রুত পুনরুদ্ধার করছে। এ প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অটো, রিয়েল এস্টেট, আর্থিক ও গৃহস্থালি খাতে বিজ্ঞাপন ব্যয় বৃদ্ধি।
ভারতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়ার ক্রমাগত আধিপত্যের কিছু কারণ রয়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ম্যাডিসন ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান স্যাম বালসারা। তিনি বলেন, ‘অটোমোবাইল, টু-হুইলার, টায়ার, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিকস, ই-কমার্স, খুচরা পণ্য, গহনা ও বিনোদনসহ প্রচুর খাত রয়েছে, যারা বিশ্বাস করে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় সংবাদপত্রে প্রথম পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন একটি প্রভাবশালী ব্র্যান্ড উন্মোচনের জন্য অপরিহার্য মাধ্যম। গ্রাহকপ্রতি প্রচার হিসেবে ছাপা কাগজ ব্যয়বহুল হলেও ব্যাপক পাঠক সংখ্যার কারণে একদিনেই বড় ও দ্রুত প্রভাব তৈরি করতে পারে। অন্য মাধ্যমগুলো তাদের ধরনের কারণে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বেশি সময় নেয়।’
তিনি আরো জানান, কম দাম ও দ্রুত বিক্রি হয় এমন ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) কোম্পানিগুলো স্থানীয় পর্যায়ে সাফল্য পেতে মুদ্রিত সংবাদপত্রের ওপর নির্ভর করছে।
টিএএম মিডিয়া রিসার্চের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এ বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) প্রকাশনা প্রতি বিজ্ঞাপনের স্থান বরাদ্দ ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যাং ইন মিডলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা অংশীদার নরেশ গুপ্তের মতে, মুদ্রিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরতে পারে। পাশাপাশি বড় সংখ্যক গ্রাহকের মাঝে তাৎক্ষণিক পৌঁছতে সহায়তা করে, এমনকি ডিজিটাল-ফার্স্ট ব্র্যান্ডগুলোও নিজেদের পরিচিত করতে প্রিন্ট মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান হারে বিনিয়োগ করছে।
অন্যদিকে ব্র্যান্ড কৌশলবিদ আম্বি পরমেশ্বর জানান, ডিটুসি (ডিরেক্ট-টু-কনজিউমার) ব্র্যান্ডগুলো বুঝতে পেরেছে যে শুধু পারফরম্যান্স মার্কেটিংয়ে গ্রাহকের আকৃষ্টের ওপর নির্ভর করলে বাজারে প্রিমিয়াম মূল্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। প্রবৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছানোর পর ব্র্যান্ডগুলো মুদ্রণ ও টিভি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্র্যান্ড বিপণনে বিনিয়োগ শুরু করে।
সূত্র : দ্য হিন্দু।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন