রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রুবলের ব্যবহার বেড়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে রুবলের ব্যবহার ২০২১–২৩ সময়ে তিন গুণ হয়েছে। দেশটির রপ্তানি বাণিজ্যের ৩৯ শতাংশই এখন রুবলে হচ্ছে। গত সপ্তাহে মস্কোয় অনুষ্ঠিত রাশিয়ান স্টেট কাউন্সিলের এক সভায় বিষয়টি উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট আরও জানিয়েছেন, দেশটির রপ্তানি বাণিজ্যে ‘বিষাক্ত পশ্চিমা মুদ্রার’ ব্যবহার গত বছর কমে অর্ধেক হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার হুমকি অগ্রাহ্য করে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এরপর দেশটির ওপর শত শত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সেই বাস্তবতায় বিকল্প পদ্ধতিতে বাণিজ্য বিস্তারে নতুন পদক্ষেপ নেয় রাশিয়া। বিশেষ করে বন্ধুসুলভ নয়—এমন দেশগুলোকে রুবলের মাধ্যমে গ্যাস কিনতে বাধ্য করা হয়। ঐ বছর ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রাশিয়া। নিষেধাজ্ঞা আরোপের তালিকায় রযেছে পশ্চিমা বিশ্ব, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানের পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ব্যাংক ও ধনী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে দেয়া হচ্ছে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, আরও বড় পরিসরে রুবল কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। পেমেন্ট সিস্টেম ও প্ল্যাটফর্ম ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তির পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানা তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করে। সেই সঙ্গে সুইফট ব্যবস্থায় রাশিয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন রাশিয়া বাধ্য হয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে লেনদেনে ঝুঁকে পড়ে। রাশিয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বের অন্যান্য দেশও বিকল্প পদ্ধতিতে লেনদেনের চিন্তা করছে বলে জোর দিয়ে বলেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বেই এখন তথাকথিত সুপ্রান্যাশনাল (একাধিক দেশ নিয়ে) পেমেন্ট বা অর্থ পরিশোধ অবকাঠামো তৈরির চেষ্টা চলছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভূ–অর্থনীতিতে আরেকটি পরিবর্তন এসেছে। সেটা হলো, রাশিয়া ও চীনের কাছাকাছি আসা। চীন এখন রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত দুই বছরে অনেকটাই বেড়েছে। তারা নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করছে। ফলে ডিডলারাইজেশন গতি পেয়েছে। ২০১৫ সালে রাশিয়া-চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের; ২০২০ সালে ছিল ১০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার; ২০২২ সালে তা ১৯ হাজার কোটি ডলারের উন্নীত হয়। ২০২৩ সালে তা ২৪ হাজার কোটি ডলারে উঠছে; অর্থাৎ ২০১৫ সালের পর তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় চার গুণ হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও জানান, রপ্তানির মূল্য পরিশোধ এখনও বড় সমস্যা। পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানির লেনদেন বাধাগ্রস্ত করছে। মূলত লেনদেনের সমস্যা সমাধানে রুবলের ব্যাপকভিত্তিক ব্যবহারে জোর দিচ্ছে রুশ ও মিত্র দেশগুলো। কিন্তু পশ্চিমারা সেখানেও নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাগড়া দিচ্ছে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, আমি আরেকটি বিষয়ে জোর দিতে চাই। সেটা হলো, বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা ও ডিজিটাল আর্থিক সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এ ধরনের ব্যবস্থা তৃতীয় দেশের হস্তক্ষেপ ব্যতীত আরও সহজ ও স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে উপকরণজনিত সমস্যার মুখে পড়েছে রাশিয়া। তবে মস্কোর আশা, উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলীয় বাণিজ্য পথের কল্যাণে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য খুব একটা মসৃণ হচ্ছে না। এমনকি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছে দেশটির রুশ কোম্পানিগুলো। যেমন ক্রেতা খুঁজে বের করা, ব্যবসায়িক আলোচনা ও বিপণনের তথ্য প্রাপ্তি—এসব ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখে পড়ছে রাশিয়া। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। এসব সমস্যা সমাধানে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন