চীনে বিয়ের সংখ্যা কমেছে, অন্যদিকে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। গত বছর কিছুটা বাড়লেও ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির বিয়ের সংখ্যা ৩৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে গিয়েছিল। এ অবস্থায় ওয়েডিং ফটোগ্রাফিসহ বিয়েসংশ্লিষ্ট নানা পেশায় পরিবর্তন এসেছে। একই সঙ্গে নতুন নতুন ব্যবসারও সূচনা হয়েছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে দেশটিতে ১ কোটি ৩০ লাখ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখে, যা ১৯৮৫ সালে নথিভুক্তি শুরুর পর সর্বনিম্ন। ২০২৩ সালে বিয়ের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে ৮০ লাখ হলেও একে এখনো ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবেই দেখছে কর্তৃপক্ষ।
পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য থেকে আরো জানা যায়, বিবাহবিচ্ছেদ ২০১৯ সালে রেকর্ড ৪৭ লাখে পৌঁছায়, যা দুই দশক আগের তুলনায় চার গুণ বেশি। সরকার অবশ্য বিবাহবিচ্ছেদ কমানোর চেষ্টা হিসেবে ২০২১ সালে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে। আইনে উল্লেখ রয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের আগে দম্পতিদের ৩০ দিনের ‘পুনর্বিবেচনা’ পর্বের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আবারো ভেবে দেখতে পারেন। আইনটির কারণে সাময়িকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ কমলেও ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
বিয়ে কমে ও বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট পেশায় পরিবর্তন এসেছে। আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন ওয়েডিং ফটোগ্রাফার তান মেংমেং। মধ্য হেনান প্রদেশে ২৮ বছর বয়সী এই ফটোগ্রাফারের স্টুডিও আছে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আয়ের প্রবাহ বজায় রাখা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এজন্য তিনি বিয়ের ছবি ছাড়াও যারা দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে চান এবং শেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে চান তাদের সেবা দিয়ে থাকেন। তিনি জানান, সরকারি অফিসে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য দীর্ঘ সারি দেখে তিনি তার কাজের ধরনে পরিবর্তন এনেছেন। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত মেংমেং ৩০ দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের আগের মুহূর্তের ছবি তুলেছেন। একে ভালো আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুখ-দুঃখ উভয় মুহূর্তই ক্যামেরাবন্দি করা গুরুত্বপূর্ণ।’
বিবাহবিচ্ছেদকে ঘিরে আরো অনেক ফটোগ্রাফার তাদের কাজের ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। বিবাহবিচ্ছেদ যেন অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সাধারণ মানুষ সেটিকে গ্রহণও করছে। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জিয়াওহংশুতে শেয়ার করা একটি ছবিতে দেখা যায়, কিছু দম্পতি তাদের বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্রে সই করছেন এবং অন্যরা তাদের বিবাহবিচ্ছেদের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন।
বিবাহবিচ্ছেদ-পরবর্তী সেবাও দিচ্ছে কিছু কোম্পানি। প্রেম ও দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিচিহ্ন বিবাহবিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে অনেকেই মুছে ফেলতে চান। অনেক ক্ষেত্রে এর পরিসর এতই বড় হয় যে তারা পেশাদার কোম্পানির শরণাপন্ন হন।
চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ৬০ মাইল দূরে একটি কারখানায় লিউ ওয়েই ও তার দল এ সেবা দিয়ে থাকেন। স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করার আগে ছবির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো স্প্রে রঙ দিয়ে ঢেকে দেন। কাজটি ঠিকঠাক সম্পন্ন হলো কিনা তার প্রমাণ হিসেবে পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও করা হয়।
২০২১ সালে কোম্পানি দাঁড় করানোর পর থেকে লিউ ওয়েই ২ হাজার ৫০০ দম্পতির ছবি ধ্বংস করেছেন। তার থেকে সেবা নিতে ৮ থেকে ২৮ ডলারের ফি দিতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো পেং জিউজিয়ান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম ব্যক্তি স্বাধীনতা ও পেশাগত উন্নতিকে অগ্রাধিকার দেয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে। তাছাড়া শুধু বাধ্যবাধকতার খাতিরে অসুখী দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার ধারণাও এখন সেকেলে।’
সূত্র : সিএনএন।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন