বিশ্বে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশ চীন। দেশটিতে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের চাহিদা কমেছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কয়েক দিন ধরেই নিম্নমুখী ছিল পণ্যটির দাম। তবে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) দশমিক ৫০ শতাংশীয় সুদহার কমিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া হারিকেন ফ্রানসিনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্যটির সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। এটিও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম নভেম্বরের সরবরাহ চুক্তিতে গতকাল আগের দিনের তুলনায় ১৪ সেন্ট বা দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য পৌঁছেছে ৭৪ ডলার ৬৩ সেন্টে। অন্যাদিকে একই মাসের সরবরাহ চুক্তিতে মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের তুলনায় ১৬ সেন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। এতে এর ব্যারেলপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭১ ডলার ১৬ সেন্টে। অনিক্স ক্যাপিটাল গ্রুপের গবেষণা প্রধান হ্যারি চিলিংগিরিয়ান বলেন, ‘ফেড উল্লেখযোগ্য হারে সুদহার কমালেও জ্বালানি তেলের দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাড়ছে। বর্তমান বাজার অর্থনৈতিক নির্দেশনার জন্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্ল্যাশ পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) প্রকাশের দিকে নজর রাখবে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেলে জ্বালানি তেলের দাম আবার নিম্নমুখী হতে পারে।’
আইজি মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট ইয়েপ জুন রং বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েগেছে। বৃহত্তর একটি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকির কারণে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়তে পারে।’
এদিকে ভারতে গত মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। এ সময় দেশটির মোট উত্তোলন পৌঁছেছে ২৪ লাখ টন বা দৈনিক গড়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ ব্যারেলে।
ভারতের আগস্টে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের অধিকাংশই এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি) থেকে। আগস্টে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১৬ লাখ টন জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে। এছাড়া এ সময় জ্বালানি তেল পরিশোধন কার্যক্রম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ২ কোটি ১৫ লাখ টনে নেমেছে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হ্রাসের ফলস্বরূপ আগস্টে ভারতের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। গত দুই বছরে ভারত রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২১ সালে শুরু হয়। আগ্রাসনের অভিযোগ এনে ইউক্রেনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। বিআইএমসিওর হিসাবমতে, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে সমুদ্রপথে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের অন্তত ৬৫ শতাংশ রফতানি হতো ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রে। দেশ দুটিতে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন ক্রেতা খুঁজতে বাধ্য হয় রাশিয়া। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসে ভারত। দেশটি রাশিয়ার ইউরাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়ায়। (খবরঃ রয়টার্স, ইকোনমিক টাইমস)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন