মিসরের জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ২০২০ সালের আগস্টের পর প্রথমবারের মতো বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে উৎপাদন বাড়ায় দেশটির স্থানীয় ব্যবসায় ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
এসঅ্যান্ডপি ইজিপ্ট পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স মিসরের জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের প্রবণতা বিশ্লেষণের অন্যতম মানদণ্ড। গত মাসে এ সূচক ৫০ দশমিক ৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, যা এর আগের মাসে ছিল ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট। এটি ৫০ পয়েন্টের ওপরে থাকলে অর্থনীতির প্রসারণ এবং এর নিচে থাকলে সংকোচন বোঝায়।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওয়েন বলেন, ‘আগস্টের জরিপের তথ্য অনুযায়ী মিসরের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।’ তিনি বলেন, ‘পিএমআইয়ের বেশ কয়েকটি উপসূচক আগস্টে প্রবৃদ্ধির সংকেত দিয়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও বেচাকেনা বেড়েছে। বোঝা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম ও সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রত্যাশাও বেড়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো স্থিতিশীল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’
মিসর আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। কিছুদিন আগে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কমে গেলেও সম্প্রতি তা পুনরুদ্ধার হচ্ছে। ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে আশাবাদ গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মী নিয়োগ এবং মজুদের পরিমাণ বেড়েছে। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, প্রত্যাশা বাড়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো টানা দ্বিতীয় মাসে কর্মী নিয়োগ বাড়িয়েছে।
এদিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে মিসরীয় পাউন্ডের অবনমনের কারণে কোম্পানিগুলো বাড়তি খরচের মুখোমুখি হয়েছে। ফলে জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতের তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। এতে বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের কারণে বিক্রয়মূল্য বেড়েছে।
উৎপাদন ব্যয়ে মূল্যস্ফীতির হারও টানা তৃতীয় মাসে বেড়েছে। একই সময়ে পরিবহন খরচ ও সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের বেতন আরো বাড়িয়েছে। তাদের ভাষ্য, ‘ব্যয় চাপ বাড়ায় আগস্টে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।’
অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওয়েন বলেন, ‘পরিস্থিতি মিশ্র প্রবণতায় আছে। অনেক পণ্যের চাহিদা এখনো বাড়েনি। ফলে নতুন কার্যাদেশের পরিমাণ কমে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ একটি নতুন ঝুঁকি। আগস্টের তথ্যানুযায়ী পাঁচ মাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ব্যবসার ব্যয় বেড়েছে। কিছু কোম্পানি বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপ তাদের খরচ বাড়াচ্ছে। এতে বাজারের সামগ্রিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
মিসর ২০২২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুপারিশকৃত অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে চারবার মুদ্রার মান কমানো এবং খাদ্য ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করেছে দেশটি। যদিও কিছু ভর্তুকি এখনো বহাল রয়েছে।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মিসরের অর্থনীতি। গত মার্চে স্থবির অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ৮০০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। এর আগে ২০২২ সালে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছিল আইএমএফ। ওই ঋণের সঙ্গে আরো ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এর আওতায় তাৎক্ষণিকভাবে ৮২ কোটি ডলার উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছে দেশটি।
আইএমএফ গত মাসের এক প্রতিবেদনে জানায়, মিসর আঞ্চলিক সংঘাতের প্রভাব এবং ঋণ গ্রহণের শর্ত পূরণের চেষ্টা করছে। ফলে মিসরের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো চ্যালেঞ্জিং। সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে মিসরের অর্থনীতিতে দুর্বলতার লক্ষণ দেখা গেছে। তবে মার্চে মিসরীয় পাউন্ডের মান বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। এতে আস্থা বাড়ে বিনিয়োগকারীদের।’
চলতি বছর গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে লোহিত সাগরে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে মিসরের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস সুয়েজ খাল থেকে আয় ৬০ শতাংশ কমে যায়। একই কারণে চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে ধীরগতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
Source : The National
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন